বিশেষ প্রতিবেদক: দেশের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় প্রথম সারিতে কাজ করেন বন অধিদপ্তর তথা বনবিভাগের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা বনদস্যু দমন, বনজ সম্পদ রক্ষা, বন্যপ্রাণী উদ্ধার, অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বহু দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ভুঁইফোড় অনলাইন পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিত্তিক তথাকথিত সংবাদকর্মীদের অপপ্রচারণা এ গুরুত্বপূর্ণ খাতের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বন বিভাগ। বনভূমি রক্ষা ও বন আইন প্রয়োগে মাঠপর্যায়ে কাজ করা কর্মকর্তারা জানান, কিছু অনলাইন মাধ্যম নিয়মিতভাবে যাচাইবাছাই ছাড়াই বিভ্রান্তিকর, অতিরঞ্জিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ করছে। এসব তথাকথিত ‘হলুদ সাংবাদিক’ বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা–কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক প্রতিবেদন তৈরি করে সামাজিকমাধ্যমে প্রচার করছে।
এ ধরনের সংবাদ কেবল ব্যক্তিমর্যাদা নষ্টই করছে না—বরং দীর্ঘদিন ধরে বনসুরক্ষায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটির অর্জিত সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘চাঁদাবাজির চাপ ব্যর্থ হলে শুরু হয় অপপ্রচার’—মাঠকর্মীদের অভিযোগ। বনবিভাগের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, কিছু পক্ষ আর্থিক সুবিধা বা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে চাপ সৃষ্টি করে। দাবি পূরণ না হলে বিভিন্ন নিবন্ধনবিহীন অনলাইন পেজ বা ব্যক্তিগত আইডি থেকে ‘সংবাদ’ আকারে অপপ্রচার চালানো হয়।
অনেকের মতে, “যারা বন উজাড়, চোরাচালান বা জমি দখলের মতো অপরাধে জড়িত—তাদের পক্ষেও এ ধরনের ভুয়া সংবাদ ব্যবহার করা হয়। এতে মাঠের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা অনর্থক মানসিক হয়রানির শিকার হন এবং প্রকৃত অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে।”
জাতীয় সম্পদ রক্ষায় সর্বদা সক্রিয় থাকা বনবিভাগ সাম্প্রতিক অপপ্রচারের কারণে অযথা এলোমেলো প্রশ্নের মুখে পড়ছে। অভিজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের ভিত্তিহীন প্রচারণা দেশের পরিবেশবিষয়ক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর একটিকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, “বনবিভাগ দেশের অহংকার। তাদের নিয়মিত মনোবল ভাঙার অর্থ হলো—বন রক্ষা কার্যক্রমকে পিছিয়ে দেওয়া।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রেস কাউন্সিল আইন লঙ্ঘনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাচাইবাছাইহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য প্রচার করা সংবাদমাধ্যমের নৈতিকতার পরিপন্থী। এমনকি মিথ্যা তথ্য ছড়ানো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্য প্রচলিত আইনের লঙ্ঘনের পর্যায়েও পড়তে পারে।
তারা মনে করেন, যে কোনো সংবাদ প্রকাশের আগে তথ্যের সত্যতা যাচাই করা এবং দুপক্ষের বক্তব্য নেওয়া সাংবাদিকতার ন্যূনতম নীতি—যা অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না।
বনের প্রকৃত কর্মীরা মনে করেন, ভুয়া অনলাইন পেইজ ও হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা জোরদার করা জরুরি। তা না হলে ত্যাগী মাঠকর্মীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে এবং দুর্বৃত্তচক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তারা আরও বলেন, “সরকার ও বন অধিদপ্তর যদি এই অপপ্রচার রুখতে উদ্যোগী হয়, তাহলে প্রকৃত বনরক্ষাকারীরা আরও উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে পারবেন।



