নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ভূমিকম্পের রেশ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। ভূস্তরের গভীরে সৃষ্ট শক্তি সম্পূর্ণভাবে নির্গত না হওয়ায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আবারও কম্পন অনুভূত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ এবং এর প্রতিবেশী ভারত, মিয়ানমার ও ভুটান সীমান্ত এলাকায় অন্তত ২ থেকে ৩টি ‘আফটারশক’ বা পরবর্তী কম্পন অনুভূত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ভূমিকম্পবিষয়ক তথ্য প্রদানকারী মাধ্যম ‘আর্থকোয়েক নিউজ এভরিডে’-এর এক প্রতিবেদনে এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় ধরনের ভূমিকম্পের পর ভূগর্ভস্থ প্লেট বা শিলাস্তরের ভারসাম্য ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগে। এ সময় ফাটলের আশপাশে জমে থাকা চাপ বা শক্তি ধীরে ধীরে মুক্ত হতে থাকে। এই শক্তি নির্গমনের ফলেই মাঝারি থেকে তুলনামূলক শক্তিশালী আফটারশকের সৃষ্টি হয়। ভৌগোলিক অবস্থানগতভাবে বাংলাদেশ ‘ইন্দো-বার্মা সিসমিক জোন’-এর খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায়, এ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ ফাটল থেকে নির্গত শক্তির প্রভাবে কম্পন সহজেই অনুভূত হতে পারে।
সম্ভাব্য এই আফটারশক বা কম্পন দেশের সব জায়গায় সমানভাবে অনুভূত নাও হতে পারে। তবে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল, বিশেষ করে সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা এবং ভারত ও মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলগুলোয় এর প্রভাব বেশি পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ভুটান ও উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশেও কম্পন অনুভূত হতে পারে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, আসন্ন কম্পনগুলোর মাত্রা মূলত ‘মাঝারি’ (Moderate) থেকে ‘তুলনামূলক শক্তিশালী’ (Moderate-Strong) হতে পারে। যদিও এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম, তবে নড়বড়ে বা আগে থেকেই ফাটল ধরা দুর্বল ভবনের জন্য এটি বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ হঠাৎ আঘাত হানে, তাই আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনাগুলো হলো:
১. ফাটলযুক্ত বা দুর্বল কাঠামোর ভবনে অবস্থান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. কম্পন অনুভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথা রক্ষা করে শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
৩. তাড়াহুড়ো করে নামার সময় লিফট ব্যবহার করা যাবে না।
৪. বড় কম্পন থামার পরপরই ভবন থেকে বেরিয়ে নিরাপদ ও খোলা জায়গায় অবস্থান নিতে হবে।
৫. যেকোনো ধরনের গুজবে কান না দিয়ে বা আতঙ্কিত না হয়ে নির্ভরযোগ্য বা সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে ব্যক্তিগত সচেতনতাই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে পারে। তাই আগামী এক সপ্তাহ সবাইকে বিশেষ সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।



