নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ৫ থেকে ৭ তলা বা তার চেয়ে উঁচু ভবনে বসবাসকারীদের জন্য এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দুর্যোগ মোকাবিলা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তুতির অভাব এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই হতাহতের ঘটনা বাড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা ভবনের ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম বা তার ওপরের তলায় থাকেন, কম্পন শুরু হলে তাঁদের জন্য সিঁড়ি ব্যবহার করা ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্তের শামিল। কারণ, ভূমিকম্পে ভবনের নিচের তলা ধসে পড়লে ওপরের অংশও নিচে আছড়ে পড়ে। এ সময় সিঁড়িতে ভিড়, ধাক্কাধাক্কি এবং বিদ্যুৎ চলে গিয়ে অন্ধকারের সৃষ্টি হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ভূমিকম্পে প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ সিঁড়িতেই আহত বা নিহত হন।
দৌড়াদৌড়ি না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বেডরুমে থাকলে শক্ত খাটের নিচে এবং ড্রয়িং বা ডাইনিংয়ে থাকলে মজবুত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন। কোনো আশ্রয় না পেলে দেয়ালের কোণে বসে মাথা ও ঘাড় হাত দিয়ে ঢেকে রাখুন। মনে রাখবেন:
- বারান্দায় যাওয়া যাবে না, কারণ রেলিং ভেঙে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
- বাথরুম তুলনামূলক নিরাপদ হতে পারে। বালতি উল্টো করে মাথায় দিয়ে বা হেলমেট, ঝুড়ি কিংবা হাতের কাছে পাওয়া ব্যাগ দিয়ে মাথা রক্ষা করে বসে থাকুন।
যাঁরা ১ম বা ২য় তলায় থাকেন, তাঁরা তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন। কম্পন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের দরজা খুলে রাখতে হবে, যাতে ফ্রেম বেঁকে গিয়ে দরজা জ্যাম না হয়ে যায়। প্রথম ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় চলে আসতে হবে। তবে ভবন থেকে বের হয়েই দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ানো যাবে না। অন্তত ১০০ ফুট দূরে খোলা জায়গায় বা মাঠে অবস্থান নিতে হবে।
দুর্ভাগ্যবশত ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়লে আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করবেন না। এতে ধুলোবালি শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং গলা শুকিয়ে যায়।
- হুইশেল বা বাঁশি থাকলে তা বাজান।
- হাতের কাছে পাইপ বা দেয়াল পেলে তাতে ৩ বার টোকা দিন (এটি আন্তর্জাতিক রেসকিউ সিগন্যাল)।
- মোবাইল বা টর্চ অন করে আলো জ্বালান, তবে অযথা কথা বলে ব্যাটারি নষ্ট করবেন না।
- ধুলো থেকে বাঁচতে মুখে কাপড় চেপে ধরুন।
ভূমিকম্প হঠাৎ আসে, তাই আজ থেকেই কিছু প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি:
১. বিছানার পাশে সবসময় একজোড়া জুতা, হেলমেট ও হুইশেল রাখুন।
২. ভারী আলমারি, টিভি বা ফ্রিজ এমনভাবে রাখুন যেন তা গায়ের ওপর উল্টে না পড়ে।
৩. গ্যাস সিলিন্ডার চেইন দিয়ে বেঁধে রাখুন।
৪. দরজা কখনো অটো-লক করবেন না এবং চাবি সবসময় হাতের কাছে রাখুন।
ঢাকাবাসীর জন্য একটি সহজ সূত্র মনে রাখা জরুরি—
- ৪র্থ তলার ওপরে থাকলে: দৌড়াবেন না, শুধু টেবিল বা বিছানার নিচে আশ্রয় নিন।
- ১ম বা ২য় তলায় থাকলে: ২০ সেকেন্ডের মধ্যে ভবন থেকে বেরিয়ে নিরাপদ দূরত্বে যান।
প্রস্তুতি ছাড়া ঢাকায় ভূমিকম্প মোকাবিলা করা ভাগ্যের ব্যাপার, কিন্তু সঠিক প্রস্তুতি থাকলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়।



