ইসলাম ধর্ম

কালিমার ‘লা’ টেনে না পড়লে কি অর্থ উল্টে যায়? যা বলছেন আলেমরা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’—ইসলামের মূল ভিত্তি ও সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই কালিমার উচ্চারণ নিয়ে একটি বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, কালিমার শুরুতে ‘লা’ অক্ষরটি টেনে (মাদ) না পড়লে এর অর্থ সম্পূর্ণ উল্টে যায়। বলা হচ্ছে, টান না দিলে এর অর্থ দাঁড়ায়—‘অবশ্যই আল্লাহ ছাড়া উপাস্য আছে’, যা ইমানের পরিবর্তে কুফরির দিকে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মুসল্লিদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও ভীতি তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে সৌদি আরবের জুবাইল দাওয়াহ অ্যান্ড গাইডেন্স সেন্টারের দাঈ শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল সুস্পষ্ট ফতোয়া ও ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।

প্রচারিত ওই দাবির সত্যতা নাকচ করে দিয়ে শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী জানান, কালিমার ‘লা’ অক্ষরটি টেনে না পড়লে অর্থ উল্টে যাবে—এই দাবিটি সঠিক নয়। আরবি ব্যাকরণ অনুযায়ী, জুমলা ইসমিয়্যাহ বা নামবাচক বাক্যের শুরুতে নিশ্চয়তা জ্ঞাপক ‘লাম’ (লামে তাকিদ) সাধারণত ব্যবহৃত হয় না। তাই কেউ যদি ভুলে বা অজ্ঞতাবশত ‘লা’-তে টান না দেন, তবে সেটি ব্যাকরণগত ভুল হিসেবে গণ্য হবে ঠিকই, কিন্তু এতে বাক্যের মৌলিক অর্থ বিকৃত হয়ে ‘আল্লাহ ছাড়া উপাস্য আছে’ হয়ে যাবে না।

যারা বলছেন যে, টান না দিলে ঈমান চলে যাবে বা কাফের হয়ে যাবে, এই বক্তব্যকে ‘বাড়াবাড়ি’ ও ‘অজ্ঞতাপ্রসূত’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

শায়খ হাদী ব্যাখ্যা করেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’—এর প্রথম ‘লা’-এর মধ্যে সামান্য টান বা মাদ দিয়ে পড়াই হলো বিশুদ্ধ ও আরবি ভাষার সঠিক নিয়ম। মুমিনের উচিত সর্বশ্রেষ্ঠ এই জিকিরটি শুদ্ধ উচ্চারণে পড়ার চেষ্টা করা। তবে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বা অনিচ্ছাকৃত ভুলে টান না দিলে উচ্চারণগত ত্রুটি হবে, কিন্তু অর্থের বিপর্যয় ঘটবে না।

অনেকে মনে করেন, এখানে ‘লা’ অক্ষরটি তিন আলিফ পরিমাণ টানতে হবে। এ বিষয়ে শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বলেন, তিন আলিফ টানার বিষয়টি জরুরি নয়। কারণ, তাজবীদের সূক্ষ্ম নিয়মাবলি মূলত কুরআন তিলাওয়াতের জন্য প্রযোজ্য। সাধারণ দোয়া, জিকির, হাদিস পাঠ বা সাধারণ আরবি কথাবার্তায় তাজবীদের কড়াকড়ি নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা নেই।

সুতরাং, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্কিত হওয়ার মতো তথ্যে কান না দিয়ে বিশুদ্ধ উচ্চারণে কালিমা পড়ার অভ্যাস করা উচিত। তবে অনিচ্ছাকৃত ভুলে টান না হলে ঈমান চলে যাবে—এমন ধারণা পোষণ করা সঠিক নয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button