ইসলাম ধর্মবিশ্লেষণ

সদকা মানেই শুধু অর্থদান নয়: আখেরাত গোছানোর ১৬টি সৃজনশীল উপায়

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামে সদকা বা দানকে কেবল অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। দৈনন্দিন জীবনের ছোট ছোট কাজ, ভালো ব্যবহার এবং পরোপকারও সদকা হিসেবে গণ্য হতে পারে। সামান্য সচেতনতা এবং সদিচ্ছা থাকলে যে কেউ প্রতিদিন বিপুল সওয়াব অর্জন করতে পারেন। ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমরা সদকায়ে জারিয়া এবং সাধারণ সদকার এমন কিছু সহজ ও সৃজনশীল পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন, যা ইহকাল ও পরকালের পাথেয় হতে পারে।

এখানে দৈনন্দিন জীবনে আমলযোগ্য ১৬টি চমৎকার টিপস তুলে ধরা হলো:

১. মসজিদে জায়নামাজ দান: সামর্থ্য অনুযায়ী একটি জায়নামাজ কিনে মসজিদে রেখে দিতে পারেন। যতদিন সেই জায়নামাজে কেউ নামাজ আদায় করবেন, ততদিন আপনার আমলনামায় সওয়াব যোগ হতে থাকবে।
২. কুরআন শরিফ ওয়াকফ: স্থানীয় মসজিদে কুরআন শরিফ দান করতে পারেন। কোনো মুসল্লি যখন সেই কুরআন থেকে একটি অক্ষরও তিলাওয়াত করবেন, তার ১০ গুণ সওয়াব আপনি পাবেন।
৩. দোয়া প্রচার: ঘরের প্রবেশপথ বা বের হওয়ার দরজায় মাসনুন দোয়াগুলো লিখে টাঙিয়ে দিন। পরিবারের সদস্য বা মেহমানরা যতবার সেই দোয়া পড়বেন, আপনিও সওয়াবের অংশীদার হবেন।

৪. পাখিদের জন্য পানি: জানালার কার্নিশ বা বারান্দায় একটি বাটিতে পাখিদের জন্য পানি রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি একটি অত্যন্ত মানবিক সদকা।
৫. পানির অপচয় রোধ: গ্লাসে পানি পান করার পর অবশিষ্ট অংশ ফেলে না দিয়ে তা কোনো গাছের গোড়ায় বা ফুলদানিতে ঢেলে দিন। এতে অপচয় রোধের পাশাপাশি গাছের সেবাও হবে।

৬. শ্রমিকদের আপ্যায়ন: বাড়ির আশপাশে নির্মাণকাজ চললে বা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করলে, তাদের সাধ্যমতো ঠাণ্ডা পানি বা খাবার দিন।
৭. পুরোনো পোশাক দান: যেসব পোশাক আর ব্যবহার করা হচ্ছে না, সেগুলো জমিয়ে না রেখে গরিব ও অসহায়দের মধ্যে বিলিয়ে দিন।
৮. এতিমের দায়িত্ব: হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে সাধ্যমতো কোনো এতিম শিশুর পড়াশোনা বা খাবারের দায়িত্ব নেওয়া যায়।
৯. রোগীর সেবা ও হাসিমুখ: অসুস্থ আত্মীয় বা পরিচিতজনকে দেখতে যাওয়া এবং হাসিমুখে কথা বলাও সদকার অন্তর্ভুক্ত। ইসলামে মুচকি হাসিকে সদকা বলা হয়েছে।
১০. মানসিক সহায়তা: মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বা বিপদগ্রস্ত মুসলমান ভাই-বোনদের সাহস জোগান এবং সহানুভূতিশীল আচরণ করুন।

১১. জরিমানা বাক্স (পেনাল্টি বক্স): নিজের ভুল শোধরানোর জন্য ঘরে একটি ‘দান বাক্স’ রাখুন। যখনই মনে হবে কোনো অন্যায় বা পাপ করেছেন, সাধ্যমতো কিছু টাকা সেখানে ফেলুন। মাস শেষে সেই টাকা দান করে দিন। এতে অনুশোচনা বাড়বে এবং দানও হবে।
১২. ক্ষমা করে ঘুমানো: রাতে ঘুমানোর আগে, যারা আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তাদের মন থেকে ক্ষমা করে দিন। এটি অন্তরের প্রশান্তি এবং বড় সদকা।

১৩. দ্বীন শিক্ষা: কাউকে আলিফ-বা-তা বা দ্বীনের একটি অক্ষর শেখানোও বিশাল সওয়াবের কাজ। ওই ব্যক্তি যা শিখবেন এবং ভবিষ্যতে তিনি বা তাঁর প্রজন্ম যা আমল করবেন, তার সওয়াব আপনার কবরে পৌঁছাতে থাকবে।
১৪. উন্নয়নমূলক কাজ: সামর্থ্য থাকলে মসজিদ, মাদ্রাসা বা হাসপাতাল নির্মাণে সহায়তা করুন। এ ছাড়া গাছ লাগানো বা টিউবওয়েল স্থাপন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা শ্রেষ্ঠ সদকায়ে জারিয়া। মৃত্যুর পরও মানুষ এসব থেকে উপকৃত হবে এবং আপনি সওয়াব পাবেন।
১৫. নেক সন্তান গঠন: সন্তানদের দ্বীন ও মানবতার শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। নেক সন্তানের দোয়া মা-বাবার কবরে পৌঁছাতে থাকে।
১৬. ভালো কাজের প্রচার: এই সদকার ধারণাগুলো অন্যের সঙ্গে শেয়ার করা বা শেখানোও সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত।

সামান্য এই আমলগুলো অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে তা আমাদের পরকালের যাত্রাকে অনেক সহজ ও সমৃদ্ধ করবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button