নিজস্ব প্রতিবেদক: শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের স্ত্রী শাহীন সিদ্দিকের বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তাঁর ইউরোপীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিলাসবহুল সম্পত্তি ক্রয়ের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, শাহীন সিদ্দিক ইউরোপের দেশ সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে একাধিক ফ্ল্যাট ও জমির মালিক হয়েছেন। এসব খাতে তিনি বাংলাদেশ থেকে পাচার করা প্রায় ৭৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে শাহীন সিদ্দিক প্রায় ২.২ মিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করে সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব লাভ করেন। তবে এটিই তাঁর প্রথম প্রচেষ্টা ছিল না। এর আগে ২০১৩ সালে অ্যান্টিগুয়া-বার্বুডা এবং ২০১৫-১৬ সালে মাল্টার নাগরিকত্ব পাওয়ার চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত বিপুল অর্থ লগ্নির মাধ্যমে তিনি সাইপ্রাসের পাসপোর্ট হাতে পান। উল্লেখ্য, মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার দেবর।
সাইপ্রাসের পাশাপাশি দুবাইতেও শাহীন সিদ্দিকের নামে অন্তত তিনটি দামি সম্পত্তির হদিস মিলেছে। নথিপত্র অনুযায়ী, দুবাইয়ের অভিজাত ‘অ্যারাবিয়ান র্যাঞ্চেস’ এলাকায় এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে।
১. প্রথম সম্পত্তি: ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ‘অ্যারাবিয়ান র্যাঞ্চেস-১’ এলাকায় ৭৫১.১৮ বর্গমিটারের একটি বিশাল প্লট কেনেন তিনি। যার বাজারমূল্য ৮.৫ মিলিয়ন দিরহাম।
২. দ্বিতীয় ও তৃতীয় সম্পত্তি: ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে তিনি আরও দুটি ফ্ল্যাট কেনেন ‘অ্যারাবিয়ান র্যাঞ্চেস-৩’ এলাকায়। এর মধ্যে ১৪ নভেম্বর কেনা ফ্ল্যাটটির আয়তন ১২৯.০৩ বর্গমিটার (মূল্য ২.২ মিলিয়ন দিরহাম) এবং ১৬ নভেম্বর কেনা ফ্ল্যাটটির আয়তন ১৪৫.৮৫ বর্গমিটার (মূল্য ২.২৮ মিলিয়ন দিরহাম)।
দুবাইতে এই তিনটি সম্পত্তি কিনতে তিনি ব্যয় করেছেন প্রায় ১৩ মিলিয়ন দিরহাম, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৩ কোটি টাকার সমান।
সাইপ্রাসে নাগরিকত্ব পেতে ৩১ কোটি এবং দুবাইতে সম্পত্তি গড়তে ৪৩ কোটি—মোট ৭৪ কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগের কোনো তথ্যই শাহীন সিদ্দিকের আয়কর রিটার্নে উল্লেখ নেই। দেশীয় ব্যাংকিং চ্যানেলে এই বিপুল অর্থ বৈধভাবে বিদেশে নেওয়ার কোনো সুযোগও নেই।
প্রশ্ন উঠেছে, দৃশ্যত কোনো বড় ব্যবসায়িক কার্যক্রম ছাড়া তিনি কীভাবে এই বিপুল অর্থের মালিক হলেন? ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপার্জিত অর্থ হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পন্থায় বিদেশে পাচার করেই এই সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে।



