ইসলাম ধর্মবিশ্লেষণ

ভূমিকম্প ও বিপর্যয়: মানুষের কৃতকর্মের ফল ও কিয়ামতের আলামত

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক: ইসলামি আকিদা ও বিশ্বাস অনুযায়ী, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস বা মহামারি কেবল প্রকৃতির স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়; বরং এগুলো মানুষেরই কৃতকর্মের ফল এবং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক কঠোর সতর্কবার্তা। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও ভীতিপ্রদ বর্ণনা রয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আমাদের সেই চিরন্তন সত্যের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, মানুষের ওপর আসা বিপদাপদ তাদের পাপেরই অর্জন। সূরা আশ-শূরার ৩০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
“তোমাদের ওপর যে বিপদ উপনীত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।”

মানুষ যখন পাপে লিপ্ত হয়, তখন প্রকৃতিতে বিপর্যয় নেমে আসে। সূরা আর-রুমের ৪১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
“মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা (সৎপথে) ফিরে আসে।”

ভূমিকম্পকে কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই দিনের ভয়াবহতা বর্ণনা করতে গিয়ে সূরা আল-হজ্জের ১ ও ২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। নিশ্চয়ই কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদানকারিণী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। আর মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, যদিও তারা প্রকৃতপক্ষে মাতাল নয়; বস্তুত আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠিন।”

এছাড়া সূরা আয-যিলযাল-এ পৃথিবীর চূড়ান্ত কম্পনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, যখন পৃথিবীকে প্রচণ্ড কম্পনে কাঁপিয়ে দেওয়া হবে এবং পৃথিবী তার ভেতরের যাবতীয় বোঝা বাইরে নিক্ষেপ করবে, তখন মানুষ ভীত হয়ে বলবে—‘এর কী হয়েছে?’ সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে বের হয়ে আসবে এবং অণু পরিমাণ ভালো বা মন্দ কাজ যা সে করেছে, তা স্বচক্ষে দেখবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন যে, শেষ জমানায় ভূমিকম্পের হার বেড়ে যাবে। সহিহ বুখারির (১০৩৬) বর্ণনায় আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন:
“কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম (দ্বীনি জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং ‘হারজ’ বা খুন-খারাবি বৃদ্ধি পাবে। আর তোমাদের ধন-সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, তা উপচে পড়বে।”

সমাজে যখন অশ্লীলতা ও পাপাচার ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ভূমিধস বা আকৃতি পরিবর্তনের মতো আজাব আসার আশঙ্কা থাকে। সুনান আত-তিরমিজির (২২১২) একটি হাদিসে ইমরান ইবনু হুসাইন (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণস্বরূপ আজাব এ উম্মতের মাঝে ঘনিয়ে আসবে।”

জনৈক সাহাবি প্রশ্ন করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! কখন এসব আজাব সংঘটিত হবে?”
উত্তরে নবীজি (সা.) বললেন: “যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বিস্তৃতি লাভ করবে এবং মদ্যপানের সয়লাব শুরু হবে।”

সুতরাং, ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা, তওবা করা এবং অশ্লীলতা পরিহার করা ছাড়া মুমিনের আর কোনো পথ নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button