বৈশ্বিক

ভূমিকম্পে দৌড়াবেন না, সঠিক সিদ্ধান্তই বাঁচাতে পারে জীবন: জেনে নিন বাঁচার উপায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকার আবাসন কাঠামোর বড় অংশজুড়েই রয়েছে ৫ থেকে ৭ তলা বিশিষ্ট ভবন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে এই ভবনগুলোতে বসবাসকারীদের বেঁচে থাকা বা দুর্ঘটনার শিকার হওয়া—পুরোটাই নির্ভর করে কম্পন শুরুর প্রথম ১০ থেকে ২০ সেকেন্ডের সিদ্ধান্তের ওপর। আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি না করে সঠিক কৌশল অবলম্বন করাই এক্ষেত্রে জীবনরক্ষার চাবিকাঠি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনার আলোকে ভূমিকম্পকালীন করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়গুলো নিচে তুলে ধরা হলো।

ভূমিকম্পের সময় মানুষের সাধারণ প্রবৃত্তি হলো সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করা। তবে বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটিই মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। কম্পনের সময় নিচের তলা ধসে পড়লে ওপরের তলার ধ্বংসাবশেষ সরাসরি সিঁড়ির ওপর আছড়ে পড়ে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অন্ধকার, ভিড় এবং ধাক্কাধাক্কিতে প্রায় ৯০ শতাংশ হতাহতের ঘটনা সিঁড়িতেই ঘটে।
একইভাবে বারান্দায় যাওয়া বা লিফট ব্যবহার করাও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বারান্দার রেলিং সহজেই ভেঙে পড়তে পারে এবং লিফট ছিঁড়ে যাওয়া বা আটকে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

১. ৪র্থ তলা বা তার ওপরে থাকলে:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওপরের তলায় থাকলে নিচে নামার চেষ্টা করা আত্মঘাতী। এ সময় ‘ড্রপ-কাভার-হোল্ড অন’ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

  • বেডরুম: শক্ত খাটের নিচে আশ্রয় নিন। খাট ভেঙে পড়লেও ভেতরে ‘লাইফ ট্রায়াঙ্গেল’ তৈরি হয়, যা সুরক্ষা দেয়।
  • অন্যান্য রুম: ড্রয়িং বা ডাইনিংয়ে থাকলে মজবুত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন। কাঁচ, শোকেস বা জানালার পাশ থেকে দূরে থাকুন।
  • নিরাপদ কোণ: টেবিল বা খাট না পেলে দেয়ালের কোণে বসে মাথা ও ঘাড় ঢেকে রাখুন (সেফ কর্নার পজিশন)। ভবন ধসলেও কোণার অংশ সাধারণত টিকে থাকে।
  • মাথা রক্ষা: হেলমেট, বালতি, ঝুড়ি বা হাতের কাছে থাকা ব্যাগ দিয়ে মাথা ও ঘাড় রক্ষা করা জরুরি।

২. ১ম বা ২য় তলায় থাকলে:
নিচতলার বাসিন্দারা তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থায় থাকেন।

  • কম্পন শুরুর ১৫-২০ সেকেন্ডের মধ্যে সিঁড়ি দিয়ে নেমে খোলা জায়গায় চলে যান।
  • নামার সময় দরজা খোলা রেখে যান, যেন ফ্রেম বেঁকে দরজা আটকে না যায়।
  • বাইরে এসে ভবন, বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ থেকে অন্তত ১০০ ফুট দূরে অবস্থান নিন।

আন্তর্জাতিক রেসকিউ প্রটোকল অনুযায়ী, ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়লে চিৎকার করা উচিত নয়; এতে ধুলোবালি শ্বাসনালিতে ঢুকে শ্বাসরোধ হতে পারে।

  • কাছে হুইসেল থাকলে তা বাজান, যা উদ্ধারকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
  • হুইসেল না থাকলে দেয়াল বা পাইপে ৩ বার টোকা দিন (আন্তর্জাতিক এসওএস সংকেত)।
  • মোবাইল সচল থাকলে টর্চ জ্বালিয়ে রাখুন, তবে কথা বলে ব্যাটারি নষ্ট করবেন না।
  • ধুলো থেকে বাঁচতে মুখে কাপড় চেপে ধরুন।

দুর্যোগ বলে-কয়ে আসে না, তাই দৈনন্দিন জীবনে কিছু প্রস্তুতি রাখা জরুরি:

  • বিছানার পাশে সবসময় এক জোড়া জুতা, হেলমেট ও হুইসেল রাখুন।
  • ভারী আসবাব (আলমারি, ফ্রিজ) ও টিভি দেয়ালের সঙ্গে স্ক্রু দিয়ে আটকে রাখুন।
  • গ্যাস সিলিন্ডার চেইন দিয়ে বেঁধে রাখুন।
  • দরজায় অটো-লক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং চাবি সহজলভ্য স্থানে রাখুন।

প্রকৃতি মানুষকে অসহায় করে দিলেও সচেতনতা এবং সঠিক প্রস্তুতিই মহান আল্লাহর রহমতে বাঁচার পথ দেখাতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button