
নিজস্ব প্রতিবেদক: পতেঙ্গার বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাসুদ করিম জেল থেকে বেরিয়ে আবারও নিজ এলাকায় ফিরেছেন। হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, সরকারি জমি দখল এবং থানায় হামলার মতো গুরুতর সব অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি বর্তমানে অবস্থান করছেন পতেঙ্গার ফুলছড়ি পাড়ার নিজ বাসভবনে। তার এই ফিরে আসায় স্থানীয়দের মাঝে নতুন করে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাসুদ করিম টাকার বিনিময়ে পতেঙ্গা ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছিলেন। গত এক দশক ধরে সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং বন্দর-পতেঙ্গার সাবেক এমপি লতিফের নাম ব্যবহার করে তিনি এলাকায় নিজস্ব একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন।

মাসুদ করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাগরিকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার আউটার রিং রোড প্রকল্পের সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো গাছপালা ধ্বংস করে তিনি সেখানে অবৈধভাবে ছয় শতাধিক দোকান গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া, সাধারণ মানুষকে মারধর এবং নিয়মিত চাঁদাবাজি ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, টাকার জোরে তিনি এলাকার কিছু বখাটে ও কথিত নেতাকর্মীকে নিজের অনুগত করে রেখেছেন, যাদের মাধ্যমে তিনি অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করেন। এলাকায় তিনি ‘গিট্টুবাজ মাসুদ’ বা ‘কুত্তা মাসুদ’ নামেও পরিচিত।
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পুলিশি তৎপরতা বাড়লে মাসুদ করিম কিছুদিন কক্সবাজারে শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। সেখানে থেকেও তিনি অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে পতেঙ্গা থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে দক্ষিণ পতেঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পতেঙ্গা থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান সে সময় গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তী সহিংসতায় থানায় হামলার ঘটনায় মাসুদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে তিনি আবারও তার পুরোনো ডেরায় ফিরে এসেছেন। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মাসুদ করিম ফিরে আসায় এলাকায় আবারও অশান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এলাকাবাসী এই দুর্ধর্ষ অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।



