নিজস্ব প্রতিবেদক: ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই সিলেট অঞ্চলটি ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ হিসেবে চিহ্নিত। ইন্ডিয়ান টেকটোনিক প্লেট বা ‘ডাউকি ফল্ট’-এর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এই জনপদ যেকোনো সময় বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে নরসিংদীর মাধবদীতে সাম্প্রতিক ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনার পর সিলেটের ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকি নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট শহর থেকে ভূগর্ভস্থ সক্রিয় ‘ডাউকি ফল্ট’-এর দূরত্ব মাত্র ৫৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার। শহরের দক্ষিণ প্রান্তে এই ডাউকি ফল্ট এবং উত্তর-পূর্বে ভুটান সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে ‘কপিলি ফল্ট’। এই দুটি চ্যুতিরেখার (Fault lines) খুব কাছাকাছি অবস্থানের কারণে সিলেট অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ। ভূগর্ভস্থ এই টেকটোনিক প্লেটগুলো সক্রিয় থাকায় যেকোনো একটিতে শক্তিশালী কম্পন সৃষ্টি হলে সিলেট নগরী ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হতে পারে।
ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী, এই অঞ্চলে ১৮৯৭ এবং ১৯৮০ সালে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এছাড়া প্রায় নিয়মিতই মৃদু ও স্বল্পমাত্রার কম্পনে কেঁপে ওঠে সিলেট। বিশেষ করে ২০২১ সালের ২৯ মে মানুষের মনে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, যেদিন ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেটে মোট ৭ বার ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর মধ্যে একদিনেই কম্পন হয় ৪ বার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ভূমিকম্পের আগে বা পরে সাধারণত এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন বা ‘ফোরশক’ ও ‘আফটারশক’ দেখা দেয়। আসামের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোকে কপিলি ফল্টে জমে থাকা বিপুল শক্তির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জহির বিন আলম বলেন, “ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল অতিমাত্রায় ভূমিকম্পপ্রবণ। বাংলাদেশ মূলত ইন্ডিয়ান, বার্মা (মায়ানমার) ও ইউরেশিয়ান—এই তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এই প্লেটগুলোর মিলনস্থলে যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প সৃষ্টি হতে পারে।”
সিলেটকে ‘ডেঞ্জার জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্কবার্তা দিলেও, বাস্তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতির চিত্র হতাশাজনক। স্থানীয়দের অভিযোগ, বড় কোনো দুর্যোগ আঘাত হানলে তা সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বা প্রস্তুতি বর্তমানে প্রশাসনের প্রায় শূন্যের কোঠায়। রাজধানী ঢাকা সিলেট থেকে খুব বেশি দূরে না হওয়ায়, এখানে ৬ মাত্রার ওপরে ভূমিকম্প হলে তার ভয়াবহ প্রভাব গোটা দেশেই পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।



