
নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী নিজ জেলায় পদায়নের সুযোগ না থাকলেও, সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর নিজ এলাকাতেই বহাল তবিয়তে ছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল আউয়াল। ক্ষমতার পালাবদল হলেও তার দাপট কমেনি; বরং অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সচিব পর্যায়ের আশীর্বাদে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এবার জ্যেষ্ঠতার তালিকায় চতুর্থ স্থানে থেকেও তিন সিনিয়র কর্মকর্তাকে টপকে প্রধান প্রকৌশলীর (রুটিন দায়িত্ব) পদ বাগিয়ে নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের অভিযোগ, এই পদটি দখলে নিতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে। এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাধ্যতামূলক এনএসআই (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা) ম্ল্যায়ন প্রতিবেদনও যাচাই করা হয়নি, যা সরকারি নিয়োগ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী—প্রতিটি ধাপে তিনি নিজ ও সুবিধাজনক জেলায় পদায়ন নিশ্চিত করেছেন। বিশেষ করে নরসিংদী ও ময়মনসিংহে দায়িত্ব পালনকালে টেন্ডার বাণিজ্য ও কমিশনের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও তৎকালীন এমপি আব্দুস সাত্তারের প্রভাবে কোনো তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি।
সিলেট বিভাগে নামমাত্র সময়ের জন্য বদলি হলেও কৌশলে তিনি পুনরায় ময়মনসিংহে ফিরে আসেন এবং একই সার্কেলে প্রায় পাঁচ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন। সরকারি চাকরিতে একই স্টেশনে এবং নিজ জেলায় এমন দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান এক বিরল নজির।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও আউয়ালের ক্ষমতার খুঁটি নড়বড়ে হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে একই জেলার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে তিনি নতুন করে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এই ‘জেলা-প্রীতি’ ও সখ্যতাকে কাজে লাগিয়েই তিনি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকৌশলী আউয়ালের বিরুদ্ধে নিজের কথিত ভাতিজাকে সামনে রেখে ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনারও অভিযোগ রয়েছে। এই বেনামি ব্যবসার মাধ্যমে তিনি সরকারি প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। নামে-বেনামে দেশে এবং বিদেশে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।
জ্যেষ্ঠতা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তিনজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করে আউয়ালকে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়ায় অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। এনএসআই ক্লিয়ারেন্স ছাড়া এবং বিপুল অর্থের বিনিময়ে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দুর্নীতির একটি বড় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন সাধারণ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিতর্কিত কর্মকর্তাকে সংস্থার প্রধান পদে বসানোর মাধ্যমে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বঞ্চিত কর্মকর্তা ও অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মচারীরা।



