দুরুদ পাঠের বিস্ময়কর ফজিলত: হাদিসের আলোকে যে ৪টি বিষয় জানা জরুরি
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মুমিন হৃদয়ের প্রশান্তি আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম হলো দুরুদ শরীফ পাঠ। এটি এমন এক ইবাদত, যার মাধ্যমে বান্দা সরাসরি আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় পায়। দুরুদ পাঠের সময় চারটি বিশেষ বিষয় অন্তরে ধারণ করলে এর প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসা বহুগুণ বেড়ে যায়। হাদিস ও কুরআনের আলোকে দুরুদ শরীফের সেই অনন্য ফজিলতগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
আপনি যখনই প্রিয় নবী (সা.)-এর ওপর দুরুদ পাঠ করেন, তখন তা সরাসরি তাঁর কাছে পৌঁছানো হয়। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তাআলা একজন বিশেষ ফেরেশতা নিযুক্ত রেখেছেন, যিনি দুরুদ পাঠকারীর নাম-পরিচয়সহ সেই বার্তা রাসূলের (সা.) দরবারে পৌঁছে দেন।
এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের দুরুদ আমার কাছে পৌঁছায়।” (সুনান আবু দাউদ: ২০৪২; মুসনাদ আহমদ: ১০৫৯৪)। অপর এক হাদিস অনুযায়ী, ফেরেশতারা সেই দুরুদ পৌঁছে দেওয়ার সময় পাঠকারীর নামও উল্লেখ করেন। (মুসনাদ আহমদ: ১৬৩০৩, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯১০)।
পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আহযাবের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ করেন। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ করো এবং যথাযথভাবে সালাম প্রেরণ করো।”
আল্লাহর নির্দেশিত এই আমলের প্রতিদানও বিশাল। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দুরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেন এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।” (সুনান আন-নাসায়ি: ১২৯৭, সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯০৮)।
দুনিয়াবী দুশ্চিন্তা, হতাশা কিংবা সংকট—সবকিছুর সমাধান মিলতে পারে দুরুদ পাঠে। হাদিসে বলা হয়েছে, কেউ যদি তার দোয়ার সময়টুকু দুরুদ পাঠে ব্যয় করে, তবে আলাদা করে কিছু না চাইলেও আল্লাহ তার সব প্রয়োজন মিটিয়ে দেন।
এক সাহাবী রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি তার দোয়ার পুরো সময় দুরুদ পাঠে ব্যয় করবেন কি না। জবাবে নবীজী (সা.) বলেছিলেন, “তাহলে তোমার সব দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেওয়া হবে এবং তোমার গুনাহ মাফ করা হবে।” (সুনান আত-তিরমিজি: ২৪৫৭)। অর্থাৎ, দুরুদকে নিজের ওপর আবশ্যক করে নিলে আল্লাহ স্বয়ং বান্দার সব সমস্যার দায়িত্ব নিয়ে নেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সারা জীবন উম্মতের নাজাতের জন্য অসামান্য কষ্ট সহ্য করেছেন। সাহাবীদের ওপর নির্যাতন দেখেও তিনি ধৈর্য ধরেছেন এবং উম্মতের জন্য দোয়া করেছেন। হাশরের ময়দানেও তিনি ‘উম্মতি, উম্মতি’ বলে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। (সহিহ মুসলিম: ২০২)। যেই নবী আমাদের জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে এত ব্যাকুল, তাঁর প্রতি ভালোবাসা থেকে বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব।
আলেমগণ পরামর্শ দেন, দুরুদ শরীফের পাশাপাশি নিয়মিত ইস্তেগফার এবং দোয়া ইউনুস (লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জজলিমিন) পাঠ করলে বিপদাপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি দোয়া ইউনুস পড়বে, আল্লাহ তাকে সমস্ত সংকট থেকে মুক্তি দেবেন।” (সুনান আত-তিরমিজি: ৩৫০৫)।
দুরুদ শরীফ কেবল একটি আমল নয়, এটি জান্নাতের সুসংবাদ ও আল্লাহর রহমত লাভের চাবিকাঠি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বেশি বেশি দুরুদ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।



