মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে হাসিনার দেশে ফেরা এবং ভারতের অবস্থান: মান্নার বিশ্লেষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর দেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হলো। এই রায়, আগামীর রাজনীতি এবং ভারতের অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি নিজের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় প্রসঙ্গে নিজের প্রতিক্রিয়ায় মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যেকোনো মৃত্যুই বেদনার, তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা ও তার সরকার দেশবাসীকে যে অবর্ণনীয় কষ্ট দিয়েছে, তা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। হিটলার, মুসোলিনি বা চেঙ্গিস খানের মতো শাসকদের পরিণতির কথা ভাবলে এই রায়কে অস্বাভাবিক মনে হয় না। ইতিহাস নির্মম, পাপ কাউকেই ছাড়ে না।”
ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘদিনের পরিচয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার এমন পরিণতি অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে তার ভূমিকা এবং পরবর্তী সময়ে অনুশোচনাহীনতা এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনাকে ‘অজেয়’ মনে করা হলেও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছে। মান্না জানান, আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের নেতাকর্মীদের মধ্যেও এখন গভীর হতাশা বিরাজ করছে। তৃণমূলের কর্মীরা সন্দিহান—শেখ হাসিনা কি আদৌ আর দেশে ফিরতে পারবেন? আওয়ামী লীগ কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এত বড় বিপর্যয়ের পরেও আওয়ামী লীগের মধ্যে আত্মশুদ্ধি বা ক্ষমা চাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দলটিতে পরিবারতন্ত্র এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে, শেখ পরিবারকে বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্বে দলকে সাজানোর সাহস কারও নেই। অথচ পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ নিয়ে জনগণের সামনে আসার সুযোগ ছিল।
শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত দেবে কি না—গণমাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে মান্না সংশয় প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, ভারত শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যর্পণ করবে না। প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও কোনো দেশ যদি মনে করে, ফেরত পাঠালে আশ্রিত ব্যক্তির প্রাণনাশের আশঙ্কা রয়েছে, তবে তারা তাকে ফেরত না-ও দিতে পারে। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের রায় সেই যুক্তিকে ভারতের জন্য আরও সহজ করে দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাম্প্রতিক বিবৃতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ভারত অত্যন্ত কৌশলী ও নিরাসক্ত অবস্থান বজায় রাখছে। তারা জানিয়েছে, দণ্ডাদেশ সম্পর্কে তারা অবগত এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। এর মাধ্যমে ভারত মূলত বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সম্প্রতি দিল্লিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বৈঠকের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেন মান্না। তার মতে, ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন বা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুদ্ধ ঘোষণা করবে না, বরং কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলবে।
আগামীর রাজনীতি প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্ট করেছে যে, এই মেয়াদে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তাই শেখ হাসিনা এবং তার দলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এবং রাজনীতির নতুন সমীকরণের ওপর। তবে আপাতত হাসিনার দেশে ফেরার পথ যে কণ্টকাকীর্ণ, তা বলাই বাহুল্য।



