ইসলাম ধর্ম

ইসলামে একাধিক বিয়ে ও ইনসাফের বিধান: অক্ষম হলে এক স্ত্রীতেই সন্তুষ্টি

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামে বিবাহ একটি পবিত্র সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধন। শরিয়তে পুরুষদের জন্য একাধিক বিয়ের অনুমতি থাকলেও, এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ‘ইনসাফ’ বা ন্যায়বিচারের কঠোর শর্ত। কোরআন ও হাদিসের আলোকে দেখা যায়, একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষা করতে না পারলে এক বিয়েতেই সন্তুষ্ট থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মূলত ন্যায়বিচার করতে না পারার আশঙ্কায় ইসলামে পুরুষের জন্য এক বিয়েকেই নিরাপদ পথ হিসেবে উৎসাহিত করা হয়েছে।

একাধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তাদের মাঝে সমতা বিধান না করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। সুনান আবু দাউদের বিবাহ অধ্যায়ের ৩৯ নম্বর পরিচ্ছেদে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুই স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাদের একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়লো, কিয়ামতের দিন সে পঙ্গু (এক পাশ অবশ হওয়া অবস্থায়) হয়ে উপস্থিত হবে।’ অর্থাৎ, দুনিয়ায় বেইনসাফি করার শাস্তি হিসেবে আখিরাতে তাকে লাঞ্ছিত হতে হবে।

মানুষের পক্ষে একাধিক স্ত্রীর মধ্যে শতভাগ মানসিক সমতা বজায় রাখা যে প্রায় অসম্ভব, তা মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুরা নিসার ১২৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা কখনও স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না, যদিও তোমরা তা প্রত্যাশা করো।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে সতর্ক করেছেন যে, বাহ্যিক আচরণে সমতা আনা সম্ভব হলেও, আন্তরিক টানে সমতা বজায় রাখা মানুষের সাধ্যের বাইরে।

ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, পরিস্থিতি ও সামর্থ্যভেদে বিবাহ কারও জন্য ফরজ, কারও জন্য সুন্নত, আবার কারও জন্য হারাম হতে পারে। তবে বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে ইসলামি চিন্তাবিদদের অভিমত হলো, এই সময়ে একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে—এমনকি অনেক আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির পক্ষেও—একাধিক স্ত্রীর মধ্যে যথাযথ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত কঠিন ও প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।

যে ব্যক্তি একজন সঙ্গীর ভালোবাসায় তৃপ্ত হতে পারেন না, তাকে অসংখ্য সঙ্গী এনে দিলেও তার মনের অতৃপ্তি দূর হবে না। তাই আল্লাহ প্রদত্ত হালাল স্ত্রী বা নেয়ামতের ওপর সন্তুষ্ট থাকাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। একইসঙ্গে নিজের দৃষ্টি সংযত রাখা এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করাই শরিয়তের কাম্য। ইনসাফ লঙ্ঘনের গুনাহ থেকে বাঁচতে এক স্ত্রীতে সন্তুষ্ট থাকাই পুরুষের জন্য অধিকতর নিরাপদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button