ইসলাম ধর্ম

কোরআন-হাদিসের আলোকে নামাজের গুরুত্ব

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: একজন মানুষকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে হলে সর্বপ্রথম তাকে ঈমান আনতে হয়। মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল—এই সাক্ষ্য দেওয়ার পরই ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হিসেবে নামাজের স্থান। আরবি ‘সালাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো দোয়া, তাসবিহ, রহমত বা দয়া এবং ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা। আর ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত করার নামই সালাত বা নামাজ।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা সরাসরি ৮২ বার নামাজের কথা উল্লেখ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মেরাজে গমন করেন, তখন আল্লাহ তায়ালা মহানবী (সা.) ও তাঁর উম্মতের ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন।

নামাজ একটি ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াত নাজিল হয়েছে। সুরা বাকারার ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ মুত্তাকিদের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘যারা অদৃশ্যের বিষয়গুলোতে ঈমান আনে এবং নামাজ কায়েম করে।’ একই সুরার ৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, জাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু করো।’

নামাজ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে সুরা ইবরাহিমের ৩১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুমিন তাদের বলুন, নামাজ কায়েম করতে।’ এছাড়া সুরা বাকারার ৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দেন, ‘তোমরা লোকদের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং নামাজ আদায় করবে।’

নামাজের সময় মনোযোগ এবং একাগ্রতা প্রসঙ্গে সুরা আরাফের ২৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি বলে দাও, আমার রব ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় তোমাদের মুখমণ্ডল স্থির রেখো।’ সুরা নাজমের ৬২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অতএব, আল্লাহকে সিজদা করো এবং তাঁর ইবাদত করো।’

নামাজ মানুষকে অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে। সুরা আনকাবুতের ৪৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে।’ এছাড়া সুরা আরাফের ১৭০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আমি এরূপ সৎকর্মশীলদের কর্মফল নষ্ট করি না।’

আল্লাহর রহমত পাওয়ার শর্ত হিসেবে সুরা তাওবার ৭১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিনরা নামাজ আদায় করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ মেনে চলে, এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই করুণা বর্ষণ করবেন।’

জীবনে কোনো বিপদ বা সংকট এলে মুমিন বান্দার হাতিয়ার হলো নামাজ। সুরা বাকারার ১৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ অভয় দিয়ে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! সবর ও নামাজের দ্বারা সাহায্য গ্রহণ করো, আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।’ এমনকি ভয়ের পরিবেশেও নামাজ ছাড়ার সুযোগ নেই। সুরা বাকারার ২৩৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অশান্তি বা গোলযোগের সময় হলে পায়ে হেঁটে অথবা বাহনে চড়ে যেভাবেই সম্ভব নামাজ পড়ো। আর যখন শান্তি স্থাপিত হয়ে যায় তখন আল্লাহকে সেই পদ্ধতিতে স্মরণ করো, যা তিনি তোমাদের শিখিয়েছেন…।’

মুমিনের জীবন ও মরণ একমাত্র আল্লাহর জন্য, যা নামাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সুরা আনআমের ১৬২ নম্বর আয়াতে রাসুল (সা.)-কে বলতে বলা হয়েছে, ‘বলো, আমার নামাজ, আমার ইবাদতের সমস্ত অনুষ্ঠান, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য।’ সুরা ত্বহার ১৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, কাজেই তুমি আমার ইবাদত করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামাজ কায়েম করো।’

রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজকে ‘বেহেশতের চাবি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে রবের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, নামাজ।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রশান্তি ও শৃঙ্খলা আনয়নে নামাজ অদ্বিতীয়। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে নামাজ আদায়ের তৌফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button