Uncategorizedইসলাম ধর্ম

আফ্রিকায় বৃষ্টির প্রার্থনায় সিজদা ও এক অলৌকিক দৃশ্য

ডা. আবদুর রহমান আস-সুমাইতের জীবনের অবিশ্বাস্য ঘটনা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: আধুনিক যুগে ইসলাম প্রচারের ইতিহাসে ডা. আবদুর রহমান আস-সুমাইত (রহ.) এক বিস্ময়কর নাম। কুয়েতের এই প্রখ্যাত চিকিৎসক ও মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব আফ্রিকার গহীন অরণ্যে ইসলাম প্রচারে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার জীবনের একটি অলৌকিক ঘটনা আজও মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়, যেখানে এক সিজদার উসিলায় খরাকবলিত জনপদে নেমে এসেছিল রহমতের বৃষ্টি এবং বদলে গিয়েছিল হাজারো মানুষের ভাগ্য।

ঘটনাটি আফ্রিকার এক দুর্গম ও জনবিচ্ছিন্ন জনপদের। শাইখ আবদুর রহমান আস-সুমাইত খবর পেলেন, গহীন অরণ্যের ওই গ্রামটিতে ইসলামের আলো এখনো পৌঁছায়নি। সংবাদটি শোনামাত্রই তার অন্তরে তীব্র দায়িত্ববোধ জেগে উঠল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, যে করেই হোক সেখানে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেবেন।

তবে যাত্রাপথ ছিল অত্যন্ত বিপদসংকুল। শাইখ ও ওই জনপদের মাঝখানে ছিল একটি খরস্রোতা নদী, যা ভয়ংকর সব কুমিরে পরিপূর্ণ। স্থানীয় গাইড ও সহচররা তাকে সতর্ক করে বললেন, ‘শাইখ, এই নদী পার হওয়া অসম্ভব। ক্ষুধার্ত কুমিরগুলো ওত পেতে আছে।’

কিন্তু শাইখের ঈমানি তেজ ছিল প্রবল। শান্ত কণ্ঠে তিনি বললেন, ‘আমাকে সেখানে নিয়ে চলো, বাকি দায়িত্ব আল্লাহর।’ অসীম সাহসে ভর করে তারা নৌকায় চড়লেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে উত্তাল নদী ও হিংস্র কুমিরের বাধা পেরিয়ে তারা নিরাপদে ওপারে পৌঁছালেন।

অপরিচিত আগন্তুকদের দেখে গ্রামবাসী বিস্মিত হলো। তারা প্রশ্ন করল, ‘আপনারা কীভাবে এই মৃত্যুপুরী পার হয়ে এলেন?’ সহচররা উত্তর দিলেন, ‘যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, সেই মহান আল্লাহর দ্বীনের বার্তা নিয়ে এসেছি বলেই তিনি আমাদের রক্ষা করেছেন।’

এরপর শাইখ সুমাইত গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ভাষায় ইসলামের তাওহিদ ও রিসালতের বয়ান পেশ করলেন। তার কথা শুনে গ্রামপ্রধান এগিয়ে এসে একটি কঠিন শর্ত জুড়ে দিলেন। তিনি বললেন, ‘আমাদের এখানে দীর্ঘদিন ধরে এক ফোটাও বৃষ্টি হয়নি। খরায় মাটি ফেটে চৌচির। আপনি যদি আপনার রবের কাছে বৃষ্টি চাইতে পারেন এবং আকাশ থেকে বৃষ্টি নামে, তবেই আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে আপনার ধর্মে দীক্ষিত হব।’

শাইখ সুমাইত মুচকি হাসলেন এবং শর্তটি মেনে নিলেন। তিনি গ্রামপ্রধানকে বললেন, ‘সবাইকে মাঠে একত্রিত করুন।’

খোলা আকাশের নিচে পুরো গ্রামবাসী জড়ো হলো। শাইখ ওজু করে নামাজে দাঁড়ালেন। তার নামাজে ছিল এক অভাবনীয় প্রশান্তি। তিনি দীর্ঘ সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন। চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছিল অশ্রু। সিজদায় রত অবস্থায় বিড়বিড় করে তিনি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছিলেন—

“হে আমার রব! এই আবদুর রহমানের গুনাহের কারণে আজ তোমার দ্বীনকে লজ্জিত করো না। তোমার দ্বীনের সম্মানের খাতিরে রহমত বর্ষণ করো।”

দীর্ঘক্ষণ সিজদা ও কান্নাকাটির পর হঠাৎ বজ্রপাতের শব্দে আকাশ কেঁপে উঠল। শাইখ মাথা তুলতেই দেখলেন, পরিষ্কার আকাশ মুহূর্তের মধ্যে কালো মেঘে ঢেকে গেছে। দেখতে না দেখতেই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। শুকনো মাটি ভিজে সিক্ত হলো, আর গ্রামবাসীর চোখেমুখে ফুটে উঠল বিস্ময়।

এই অলৌকিক দৃশ্য দেখে গ্রামবাসী আর স্থির থাকতে পারল না। তারা সমস্বরে চিৎকার করে বলে উঠল—
“আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল।”

সেদিন সেই সিজদার উসিলায় পুরো জনপদ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিল।

ডা. আবদুর রহমান আস-সুমাইত (১৯৪৭-২০১৩) পেশায় ছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (ইন্টারনাল মেডিসিন ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি)। তিনি ব্রিটেনের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিলাসবহুল জীবন ও ক্যারিয়ারের হাতছানি উপেক্ষা করে তিনি স্ত্রীসহ আফ্রিকার ধুলোমলিন পথে প্রান্তরে কাটিয়েছেন দীর্ঘ ২৯টি বছর। তার নিরলস প্রচেষ্টায় ও দাওয়াতে আধুনিক ইতিহাসে একক ব্যক্তি হিসেবে সর্বাধিক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তার মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ কালেমা পড়ে মুসলমান হয়েছেন। জিয়া চকরালভি রচিত ‘রোশনি কে মুসাফির’ গ্রন্থে তার জীবনের এমন অনেক বিস্ময়কর ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়।

আল্লাহ তাআলা এই মহান দাঈর কর্মপ্রচেষ্টাকে কবুল করুন এবং আমাদেরও দ্বীনের পথে কাজ করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button