দেশপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়ারাজনীতি

খালেদা জিয়ার শারীরিক সংকটে ‘অসতর্কতার’ দায়: সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠান ও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদানের মাত্র দুদিনের মাথায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় তার শ্বাসকষ্ট তীব্র হয়েছে। চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তবে বেগম জিয়ার এই হঠাৎ শারীরিক অবনতির পেছনে ২১ নভেম্বরের অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ‘চরম অসতর্কতা’ ও ‘অতি উৎসাহী’ মহলের ভূমিকাকে দায়ী করছেন সচেতন মহল ও পর্যবেক্ষকরা।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা জানিয়ে আসছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম অত্যন্ত দুর্বল। এ কারণে গুলশানের বাসভবনে তাকে সর্বদা কঠোর সতর্কতার মধ্যে রাখা হতো, যাতে অন্যের শ্বাস-প্রশ্বাস বা সংস্পর্শ থেকে কোনো জীবাণু তাকে সংক্রমিত করতে না পারে। কিন্তু গত ২১ নভেম্বর সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে তাকে যে অবস্থায় দেখা গেছে, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জনসমাগমপূর্ণ ওই অনুষ্ঠানে বেগম জিয়ার মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। এমনকি তাকে ঘিরে থাকা নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের কারোর মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি (একজন নারী কর্মকর্তা ছাড়া)। সেখানে সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই ছিল না। হুইলচেয়ারে উপবিষ্ট বেগম জিয়ার মুখের খুব কাছে গিয়ে অনেকেই কথা বলছিলেন।

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক সে সময় বেগম জিয়ার হুইলচেয়ারের পেছনে অবস্থান করছিলেন। চিকিৎসকদের মতে, একজন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন রোগীর হুইলচেয়ার ঠেললেই তার সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না, বরং তার চারপাশে জীবাণুমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করাই প্রধান দায়িত্ব।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বেগম জিয়ার মতো জটিল শারীরিক অবস্থার রোগীকে সশরীরে উপস্থিত না করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও অনুষ্ঠানে যুক্ত করা যেত। এতে তার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হতো। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কিছু ‘অতি উৎসাহী’ ব্যক্তি নিজেদের প্রভাব জাহির করতে এবং মিডিয়া কভারেজ পেতে অসুস্থ নেত্রীকে জনসম্মুখে নিয়ে আসেন। এই অসতর্কতার ফলাফল এখন দৃশ্যমান।

অনুষ্ঠানের দুদিন পরই বেগম জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সোমবার রাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে মেডিকেল বোর্ড তাকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার বুকে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগে থেকেই হৃদরোগের সমস্যা ছিল, এর সঙ্গে নতুন করে ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, জটিল শারীরিক পরিস্থিতিতে নেত্রীকে সামনে রেখে যারা ‘জাতে ওঠার’ চেষ্টা করেছেন, তাদের এই অদূরদর্শিতার মাশুল এখন বেগম জিয়াকে দিতে হচ্ছে। বর্তমানে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় লড়ছেন দেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি পরিবার ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানানো হয়েছে, যেন বাংলাদেশের অন্যতম এই অভিভাবক দ্রুত সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসেন। চিকিৎসকরাও তাকে শঙ্কামুক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button