নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের চিকিৎসা শিক্ষা শাখার যুগ্ম সচিব মল্লিকা খাতুন দীর্ঘ নয় বছর ধরে একই মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পদে থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়ন করেছে ।
ছাত্র জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দায়িত্ব নিয়ে বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন রকম রদবদল করলেও অজানা কারণে যুগ্ম সচিব মল্লিকা খাতুন এখনো একই পদে আছেন।
এরফলে মন্ত্রণালয়ের অনেক সংস্কার কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠান।
এরকম একজন ভুক্তভোগী স¤প্রতি মল্লিকা খাতুনের গত নয় বছরের অপকর্ম তুলে ধরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন সচিব এবং স্বাস্থ্য সচিব বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন, যার কপি আমাদের হাতে এসেছে।
চিঠিতে তিনি মল্লিকা খাতুন এবং তার সহযোগী আরেক যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগের “প্রমানিত” সকল দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মূল অশ্রয়দাতা হিসেবে অবহিত করেন ।
তিনি “সৎ ও চৌকস” কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মল্লিকা খাতুনের দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।
মল্লিকা খাতুন ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রছায়ায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগে গড়ে তুলেছেন অদৃশ্য এক সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটের মূল হোতা তিনি নিজেই।
দীর্ঘ নয় বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি একই মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থেকে বিভিন্ন ধরনের বদলি বাণিজ্য, মেডিকেল, ডেন্টাল ও নার্সিং কলেজের আসন বৃদ্ধি, নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ও নবায়ন, চিকিৎসকদের বদলিসহ নানা ধরনের অপকর্মের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত থেকেছেন।
তার ব্যবসায়ী স্বামীকে দিয়ে বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন।
একজন “চৌকস দুর্নীতিবাজ” হিসেবে তিনি সব সময় তার বসদের খুশি রেখে তার অপকর্ম পরিচালনা করে গিয়েছেন এবং এখনো সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে কাঙ্খিত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেক্টরকে পূর্ণাঙ্গভাবে ঢেলে সাজানোর যে উদ্যোগ এই সরকার গ্রহণ করেছে তা বাধাগ্রস্ত করছে মল্লিকা খাতুন এবং আব্দুল কাদেরের মত দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তাগণ।
“তাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারনে অনেক সিনিয়র কর্মকর্তারা এই মন্ত্রণালয় ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু মল্লিকা খাতুন একই মন্ত্রণালয়ে রয়ে গেছেন,” যোগ করেন তিনি।
মল্লিকা খাতুনের দাপট বর্ণনা করে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ছয় মাস আগে তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত শুরু করেছিল তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই তদন্ত থেমে গেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব মো. আজিজুর রহমান “অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ” বলে মল্লিকা খাতুনের বিরুদ্ধে তদন্ত থেমে যায়। আজিজুর রহমানকে বর্তমান সরকার গত ২১ অগাস্ট বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে।
মল্লিকা খাতুন তার নানা অপকর্ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জনকৃত অবৈধ অর্থ দিয়ে ইতিমধ্যেই বিলাসবহুল একাধিক ফ্লাট কিনেছেন। এছাড়াও ঢাকার পূর্বাচলে নামে বেনামে একাধিক প্লট নিয়েছেন।
বর্তমানে এ দুর্নীতি পরায়ণ কর্মকর্তা এবং তার সহযোগীরা মিলে বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল এবং ভাইস-প্রিন্সিপাল নিয়োগে হস্তক্ষেপ করছে। এই কাজে তাকে সবসময় সহযোগিতা করে আসছেন তারই অধিনস্ত আরেক দুর্নীতিবাজ কমকর্তা চিকিৎসা শিক্ষা ১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ কামাল হোসেন।
তিনি বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা রাশিদা আক্তারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত।
বিভিন্ন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের চাপ প্রয়োগ করে তার পছন্দের ব্যক্তিদের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার কাজও করেন মল্লিকা।
নতুন চার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেবার সুপারিশ করেছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব, বর্তমানে ওএসডি আজিজুর রহমান। তাদেরকে প্রকল্প পরিচালক বানিয়ে চার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ১০,০০০ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগিয়ে নিয়েছে তার ব্যবসায়ী স্বামী।
তারিক হাসান অ্যাসোসিয়েট এবং আর্কিটেকচার মনজুরুল তার এ কাজে সহায়ক। তারা সরকারি সকল মেডিকেল কলেজে পছন্দের অধ্যক্ষ বসিয়ে তাদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন।
মল্লিকা খাতুনের অধীনস্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, ডাক্তার এবং কর্মচারীরা তার ভয়ে অতিষ্ঠ। তিনি একজন “স্বৈরাচার” যুগ্ম সচিব হিসাবে পরিচিত।
লিখিত এসব অভিযোগের ব্যাপারে মল্লিকা খাতুনের বক্তব্যের জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।