নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: পণ্য খালাসে গতি বৃদ্ধি ও আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় বা ‘ওয়েটিং টাইম’ শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এখন বিদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা বাল্ক ও কনটেইনারবাহী মাদারভ্যাসেলগুলোকে বহির্নোঙরে (আউটার অ্যাংকারেজ) দিনের পর দিন অলস বসে থাকতে হচ্ছে না। সাগরে আসামাত্রই মিলছে জেটিতে ভেড়ার অনুমতি বা বার্থিং সুবিধা। ফলে শিপিং কোম্পানিগুলোর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা (ড্যামারেজ চার্জ) সাশ্রয় হচ্ছে।
অথচ মাত্র কয়েক মাস আগেই চিত্রটি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত আগস্ট মাসেও তীব্র জাহাজ জটের কবলে পড়েছিল দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর। সে সময় জেটিতে বার্থিং পেতে পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে ৫ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে পড়েছিল যে, জট সামাল দিতে কর্তৃপক্ষকে অন্তত ১৫টি জাহাজ তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল।
তবে সেপ্টেম্বর মাস থেকে পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি হতে শুরু করে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসার পর বন্দর ব্যবস্থাপনায় গতি সঞ্চার হয়। ফলে সেপ্টেম্বর থেকে কোনো জাহাজকেই আর বহির্নোঙরে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়নি। বর্তমানে দিনের প্রতিটি জোয়ারেই জাহাজ সরাসরি জেটিতে প্রবেশ করতে পারছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘট, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি এবং টানা ছুটির কারণে শিপিং খাতে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতায় সেই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর আমিন আহমেদ আবদুল্লাহ জানান, কিছু কার্যকর কৌশল ও পদ্ধতি অনুসরণের ফলে অক্টোবর মাসে কোনো জাহাজকে বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হয়নি এবং নভেম্বরেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে জাহাজজটের কারণে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ প্রতিটি জাহাজের জন্য শিপিং কোম্পানিগুলোকে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার ড্যামারেজ বা জরিমানা গুনতে হতো। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই বাড়তি খরচ থেকে মুক্তি পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘জাহাজের ওয়েটিং টাইম কমে আসায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণ—সবাই উপকৃত হচ্ছেন। কারণ আগে জাহাজ ৫-৬ দিন বসে থাকলে শিপিং এজেন্টদের ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বেড়ে যেত, যার চূড়ান্ত প্রভাব পড়ত ভোক্তাদের ওপর।’
এদিকে, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসের পরিসংখ্যানেও দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রায় ১২ লাখ কনটেইনার এবং ৪ কোটি ৫২ লাখ মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। একই সময়ে বন্দরে এসেছে ১ হাজার ৪২২টি পণ্যবাহী জাহাজ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফজলে একরাম চৌধুরী জানান, সাগরে জাহাজের সারি না থাকায় অপারেশনাল কার্যক্রম অনেক দ্রুত হচ্ছে এবং খরচও সাশ্রয় হচ্ছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান জেটিতে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি জাহাজ বার্থিং সুবিধা পাচ্ছে। একই সঙ্গে দৈনিক ৮ হাজারের বেশি কনটেইনার ওঠানামা (হ্যান্ডলিং) হচ্ছে, যার মধ্যে প্রায় ৪ হাজার কনটেইনার বন্দর থেকে সরাসরি ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।



