নিজস্ব প্রতিবেদক: মিষ্টিজাতীয় খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ও নিষিদ্ধ ‘ঘন চিনি’ বা সোডিয়াম সাইক্লামেট। তবে আতঙ্কের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে নতুন এক তথ্য। অধিক মুনাফার লোভে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী এই ঘন চিনির সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করছেন ‘ম্যাগনেসিয়াম সালফেট’, যা মূলত জমিতে ব্যবহারের রাসায়নিক সার। বেকারি পণ্য, আইসক্রিম, বেভারেজ, জুস, চকলেট ও কন্ডেন্সড মিল্কের মতো খাদ্যে দেদারসে মেশানো হচ্ছে এই বিষাক্ত মিশ্রণ।
চিনির চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি এই সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘন চিনি বিশ্বের অনেক দেশেই নিষিদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশে অসাধু আমদানিকারকরা ‘সাইট্রিক এসিড’ এবং ‘সোডিয়াম সাইট্রেট’-এর নামে ও কোড ব্যবহার করে হাজার হাজার টন ঘন চিনি আমদানি করছে। সাইট্রিক এসিড ও ঘন চিনি দেখতে হুবহু একই রকম হওয়ায় সহজেই প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে এই বিষাক্ত পণ্য।
রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকার রাসায়নিক বাজারে অনুসন্ধানে দুই ধরনের ঘন চিনির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে খাঁটি ঘন চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২২০ টাকায়। অন্যদিকে, ভেজাল মিশ্রিত ঘন চিনি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৪০ টাকায়। দাম কম হওয়ায় এই ভেজাল চিনির চাহিদাই বাজারে সর্বাধিক এবং ব্যবসায়ীরা গাড়ি ভর্তি করে এই পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহারের জন্য।
ঘন চিনির সঙ্গে কী মেশানো হচ্ছে—এ নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভেজাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার। এই সার দেখতে দানাদার চিনির মতো, স্বাদহীন এবং দামও অত্যন্ত কম (কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা)।
বিষয়টি নিশ্চিত হতে মিটফোর্ড থেকে কেনা ভেজাল ঘন চিনির নমুনা সরকারি ল্যাবরেটরি খামারবাড়ির ‘মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’-এ পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে ওই নমুনায় ম্যাগনেসিয়াম সালফেটের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। অর্থাৎ, খাদ্যের নামে মানুষকে রাসায়নিক সার খাওয়ানো হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, সোডিয়াম সাইক্লামেট এমনিতেই ক্যান্সার, কিডনি বিকল এবং হজমশক্তি হ্রাসের মতো জটিল রোগের কারণ। এর সঙ্গে রাসায়নিক সার যুক্ত হওয়ায় এটি মানবদেহের জন্য দ্বিগুণ বিষে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মিশ্রণ নিয়মিত সেবনের ফলে কেউ কোনো রোগ থেকেই রেহাই পাবেন না এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিশুরা। পৃথিবীতে মানুষকে সার খাওয়ানোর এমন নজির বিরল।
রাস্তার পাশের শরবত ও জুসের দোকানের প্রায় ৯৯ শতাংশই এই ঘন চিনি ব্যবহার করে। সাধারণ চিনির তুলনায় এটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী। উদাহরণস্বরূপ, আড়াই কেজি সাধারণ চিনির দাম যেখানে প্রায় ৩০০ টাকা, সেখানে মাত্র ১০০ গ্রাম ঘন চিনি (দাম ৬০ টাকা) ব্যবহার করেই সমপরিমাণ কাজ হয়। এতে ব্যবসায়ীদের প্রায় ২৪০ টাকা সাশ্রয় হয়। এই সামান্য লাভের আশাতেই পুরো জাতিকে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।



