নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের চরম ক্রান্তিলগ্নে, যখন অর্থনীতি ভঙ্গুর এবং আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি—ঠিক সেই মুহূর্তে জাতির হাল ধরেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ৮৫ বছর বয়সী এই প্রবীণ ব্যক্তিত্ব নানা রাজনৈতিক অসহযোগিতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, তা সাধারণ মানুষের কাছে বিস্ময় জাগানিয়া। তার শাসনামলের সাফল্য, চ্যালেঞ্জ এবং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির রূঢ় বাস্তবতা নিয়ে জনমনে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নানামুখী চাপ ও অসহযোগিতা থাকা সত্ত্বেও ড. ইউনূস পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ায় দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। জনমনে ধারণা জন্মেছে যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেই তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। এছাড়া দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত ও বেদনাদায়ক পিলখানা হত্যাযজ্ঞের জট খুলেছেন তিনি। ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তার প্রকৃত খুনিদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন, যা বিগত সময়ে অসম্ভব মনে করা হতো।
ভঙ্গুর অর্থনীতি ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা ব্যাংক খাতকে টেনে তোলার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল জাদুকরী। দেশে-বিদেশে ঘুরে তিনি অর্থনীতির চাকা সচল করার প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশের ‘দাদাগিরি’ বা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি জাতীয় স্বার্থে আপসহীন মনোভাব দেখিয়েছেন। নানা নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির মুখেও তিনি মাথা নত করেননি; বরং কূটনৈতিক চালে প্রতিপক্ষকেই কোণঠাসা করেছেন।
বন্যা, অগ্নিকাণ্ড কিংবা পার্বত্য অঞ্চলের অস্থিতিশীলতা—কোনো কিছুই ড. ইউনূসকে লক্ষ্যচ্যুত করতে পারেনি। দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তিনি অস্থিতিশীল দেশকে স্থিতিশীলতার পথে নিয়ে এসেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, গত ১০০ বছরে এমন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো যোগ্য নেতৃত্ব বাংলাদেশে খুব কমই দেখা গেছে।
এতসব সাফল্যের পরও এক শ্রেণির ক্ষমতালোভী ও দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী তার সংস্কার কাজে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছে। কেউ তাকে ‘ক্ষমতালোভী’ আখ্যা দিয়েছে, আবার কেউ ১৫ মিনিটে সরকার পতনের হুমকি দিয়েছে। এমনকি তাকে স্বৈরাচারের সঙ্গে তুলনা করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি একটি মহল।
সচেতন মহলের মতে, এই জাতি গুণীজনের কদর করতে জানে না বলেই দেশের সেরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশত্যাগে বাধ্য হন। যোগ্য ও মেধাবী নারীরাও নোংরা রাজনীতির ভয়ে সামনে আসতে চান না। ড. ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে এলেও তাকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে কার্পণ্য করেছে অনেকে।
ড. ইউনূস হয়তো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, নির্বাচিত সরকার কি পারবে স্বৈরাচার ও বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এই স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে? যারা আজ সংস্কার কাজে বাধা দিচ্ছে এবং দেশের মঙ্গলের সমালোচনা করছে, ইতিহাস তাদের ঘৃণাভরে স্মরণ করবে। অন্যদিকে, ড. ইউনূসের সৎ সাহস, দেশপ্রেম এবং সিস্টেম পরিবর্তনের যে প্রচেষ্টা—তা কৃতজ্ঞ চিত্তে মনে রাখবে দেশের সাধারণ মানুষ।



