নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের আকবরশাহ থানার সামনেই দিনের আলোয় চলছে পাহাড় কেটে বহুতল ভবন তৈরির মহোৎসব। বিশ্বকলোনির আল-হেরা মসজিদের পাশের সরু গলিতেই কয়েক মাস ধরে অর্ধেকের বেশি পাহাড় কেটে সমতল করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—এ অবস্থায় থানা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখের সামনে এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও কার্যত কোনো প্রতিরোধই দেখা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড় কেটে তৈরি করা জায়গায় ইতোমধ্যেই বেইজ ঢালাইয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন। পিলার তোলার জন্য কন্টাক্ট করা লোহা, সিমেন্ট, বালি ও কংক্রিটের বিশাল মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে। চার-পাঁচজন শ্রমিক সেখানে নিয়মিত কাজ করছেন। রাতে আরও বেশি শ্রমিক আনা হয় বলে স্থানীয়দের দাবি। তারা জানান, রাতের অন্ধকারেই পাহাড় কাটার বড় অংশ সম্পন্ন করা হয়।
ভবনের মালিক খোকন, স্থানীয়দের কাছে পরিচিত “খোকন কসাই” হিসেবে, ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন—
এটা আমার খরিদ করা জায়গা। পাহাড়ের ভিতরেও আরও কয়েক জায়গা আমার আছে। পুলিশ এসে দেখে গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরি বলেন,
এসব বিষয়ে আমার জানা নেই।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে ফোন করা হলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি। ফলে অবৈধ পাহাড়কাটা সম্পর্কে তাদের অবস্থান কী বা কোনো অভিযান হবে কি না, সেসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় নাগরিক সমাজ বলছে, চট্টগ্রামে পাহাড় ধ্বংস এখন যেন নিয়মিত চিত্র। নগরজুড়ে প্রতিনিয়ত ভুমিদস্যুরা দখল ও দালান নির্মাণের নামে পাহাড় কাটছে, অথচ প্রশাসন—বিশেষ করে পরিবেশ অধিদপ্তর—রয়েছে রহস্যজনক নীরবতায়। অনেকে অভিযোগ করছেন, ক্ষমতাবান রাজনৈতিক পরিচয়ের ছত্রছায়ায় এবং ‘ম্যানেজমেন্টের’ জোরে এইসব পাহাড় নির্বিচারে কাটা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের স্বাভাবিক ভূপ্রকৃতি, জলাধার, সবুজ বেষ্টনী—সবকিছুই দিন দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। শুধু পরিবেশ নয়, ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে পাহাড়ধসের সম্ভাবনায় হাজারো মানুষের জীবন। তবুও থেমে নেই এ মহাদুর্যোগের প্রস্তুতি—পাহাড় কাটা, দালান নির্মাণ, আর প্রশাসনের নীরবতা মিলেই যেন এক অদৃশ্য চক্র পাহাড়গুলোকে গিলে খাচ্ছে।



