এক কাপড়ে স্বামী-স্ত্রীর ইবাদত: হযরত তালহা (রা.)-এর ত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক: দুনিয়াকে মুমিনের জন্য কারাগার বলা হয়—এই কথাটি ইতিহাসের পাতায় পাতায় সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। ইসলামি ইতিহাসের সোনালি যুগে সাহাবায়ে কেরাম দ্বীনের জন্য যে ত্যাগ ও কষ্টের মধ্য দিয়ে জীবন পার করেছেন, তা বর্তমান বিলাসী জীবনে কল্পনা করাও কঠিন। এমনই এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা বর্ণিত হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবী হযরত তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রা.)-এর জীবনে।
হাদিসের বর্ণনায় জানা যায়, হযরত তালহা (রা.) নিয়মিত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পেছনে ফজরের নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই তিনি মসজিদে অবস্থান না করে তড়িঘড়ি করে বাড়ির পথে রওনা হতেন।
সাধারণত ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত নবীজি (সা.) মসজিদে বসে সাহাবিদের উদ্দেশ্যে দ্বীনি বয়ান করতেন এবং অন্যান্য সাহাবিরাও তাঁর সান্নিধ্যে বসে থাকতেন। কিন্তু তালহা (রা.)-এর এই নিয়মিত দ্রুত প্রস্থান অন্য সাহাবিদের নজরে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন শুরু হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কানে পৌঁছায়।
নবীজি (সা.) সাহাবিদের নির্দেশ দিলেন, পরদিন ফজরের পর তালহা যেন তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। নির্দেশ অনুযায়ী পরদিন নামাজ শেষে তালহা (রা.) নবীজির (সা.) সামনে বিনীতভাবে বসে রইলেন।
বিশ্বনবী (সা.) অত্যন্ত কোমল ও স্নেহমাখা কণ্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে তালহা! আমি কি তোমাকে কোনো কষ্ট দিয়েছি? কিংবা আমি কি তোমার কোনো হক নষ্ট করেছি? কেন তুমি প্রতিদিন সালাম ফিরিয়েই চলে যাও?”
নবীজির মুখে এমন প্রশ্ন শুনে কান্নায় ভেঙে পড়লেন হযরত তালহা (রা.)। অশ্রুসজল চোখে তিনি বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমার জীবন আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আপনি আমার কোনো হক নষ্ট করেননি। কিন্তু আমার দ্রুত চলে যাওয়ার পেছনে একটি করুণ কারণ রয়েছে।”
তালহা (রা.) বলতে থাকেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আমার এবং আমার স্ত্রীর সতর ঢাকার জন্য ঘরে মাত্র একটাই কাপড় আছে। আমি যখন সেই কাপড়টি পরে নামাজে আসি, আমার স্ত্রী তখন বিবস্ত্র অবস্থায় গুহায় বা ঘরে অপেক্ষা করেন। আমি নামাজ শেষ করে দ্রুত গিয়ে কাপড়টি তাকে দিলে, তবেই তিনি নামাজ আদায় করতে পারেন। আমি যদি এখানে বসে আপনার বয়ান শুনি, তবে ওয়াক্ত পার হয়ে যাবে এবং আমার স্ত্রীর নামাজ কাজা হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়েই আমি দৌড়ে বাড়ি ফিরে যাই।”
তালহা (রা.)-এর এমন অভাব অনটন আর ত্যাগের কথা শুনে মহানবী (সা.)-এর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বললেন, “তালহা! নিশ্চয়ই তুমি জান্নাতে যাবে।” (মুসনাদে আহমদ)
শিক্ষা ও উপলব্ধি
একটি মাত্র পোশাক সম্বল করে হযরত তালহা (রা.) ও তাঁর স্ত্রী আল্লাহর ইবাদত করেছেন, তবুও তাদের মনে আল্লাহর প্রতি কোনো অভিযোগ ছিল না। ইবাদত থেকে দূরে থাকার জন্য তারা দারিদ্র্যকে অজুহাত বানাননি। অথচ আজ আমাদের অঢেল সম্পদ ও নিয়ামত থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি না, সামান্য অজুহাতেই ইবাদত থেকে দূরে সরে থাকি। এই ঘটনা আমাদের জন্য এক মহান শিক্ষার উৎস।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং দ্বীনের পথে অবিচল রাখুন। আমিন।



