ইসলাম ধর্মধর্ম ও জীবন

স্ত্রীর সঙ্গে পথচলার ইসলামি আদব ও স্বামীর আত্মমর্যাদাবোধ

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামি শরিয়তে পারিবারিক জীবন ও স্বামী-স্ত্রীর চলাফেরার ক্ষেত্রে পর্দা এবং আত্মমর্যাদাবোধের (গায়রাত) ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একজন ঈমানদার স্বামী তার স্ত্রীকে নিয়ে জনসম্মক্ষে বা রাস্তায় কীভাবে চলাচল করবেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া (হাফিজাহুল্লাহ)

তাঁর আলোচনায় স্বামী-স্ত্রীর চলাফেরার ক্ষেত্রে গাড়ি ব্যবহার থেকে শুরু করে পায়ে হাঁটার আদব এবং পুরুষের রক্ষণশীল মনোভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে।

ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার মতে, যদি কোনো ব্যক্তি আর্থিকভাবে সচ্ছল হন এবং নিজের গাড়ি থাকে, তবে স্ত্রীর পর্দার সুবিধার্থে গাড়ি ব্যবহার করাই উত্তম। আর যদি নিজের গাড়ি না থাকে এবং অন্যের গাড়িতে চড়তে হয়, সেক্ষেত্রেও বসার নিয়মে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তিনি পরামর্শ দেন, এমন পরিস্থিতিতে স্বামী সামনের আসনে বসবেন এবং স্ত্রী পেছনের আসনে বসবেন। এতে স্ত্রী জিলবাবের পাশাপাশি গাড়ির আড়ালে থেকে পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে অধিকতর নিরাপদ থাকবেন।

সচ্ছলতার অভাবে বা প্রয়োজনে যদি স্বামী-স্ত্রীকে রাস্তায় হাঁটতে হয়, তবে সেক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন এই ইসলামি স্কলার। তিনি বলেন, রাস্তায় হাঁটার সময় স্ত্রীকে সামনে দেওয়া বা পাশাপাশি হাঁটা অনুচিত। বরং স্বামী সামনে থাকবেন এবং স্ত্রী তার কিছুটা পেছনে অনুগমন করবেন।

বর্তমান সময়ে পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণে রাস্তায় হাত ধরাধরি করে বা কাঁধে মাথা রেখে হাঁটার যে প্রবণতা দেখা যায়, সেটিকে তিনি ‘কাফেরদের অভ্যাস’ বা বিজাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

স্বামী কেন সামনে হাঁটবেন—এ বিষয়ে যৌক্তিক ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্বামী সামনে থাকলে তিনি স্ত্রীর জন্য একটি ‘ঢাল’ বা সুরক্ষাবলয় হিসেবে কাজ করেন।
১. পথিমধ্যে অন্য কোনো পুরুষের মুখোমুখি হলে স্বামীই প্রথমে সালাম বিনিময় বা কথা বলবেন।
২. অন্য কেউ স্ত্রীর দিকে তাকাচ্ছে কি না, তা সামনে থাকা স্বামীর পক্ষে খেয়াল রাখা সহজ।
৩. স্বামীর সরব উপস্থিতি ও সামনে অবস্থান পরপুরুষের মনে একধরণের ভীতি বা সমীহ তৈরি করে, ফলে তারা কুদৃষ্টি দেওয়ার সাহস পায় না।

এটি স্ত্রীর ঠিক পাশাপাশি হাঁটার চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ। স্ত্রী খুব বেশি দূরে নয়, বরং সামান্য পেছনে থেকে স্বামীকে অনুসরণ করবেন, যেন স্বামী তাকে সর্বদা আগলে রাখতে পারেন।

আলোচনায় ‘গায়রাত’ বা ধর্মীয় আত্মমর্যাদাবোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পূর্বযুগের পুরুষরা তাদের মা, বোন বা স্ত্রীর ব্যাপারে অত্যন্ত রক্ষণশীল ছিলেন। তারা কখনোই চাইতেন না যে, তাদের নারীদের দিকে কেউ তাকাক বা তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ দেখুক।

সবশেষে সতর্ক করে বলা হয়েছে, যদি কোনো নারী সুপরিকল্পিতভাবে সাজসজ্জা করে জনসম্মক্ষে বের হন, তবে আত্মমর্যাদাশীল স্বামীর উচিত নয় তাকে সঙ্গ দেওয়া। এমতাবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে বের হওয়াকে একজন পুরুষের জন্য লজ্জাজনক ও অপমানজনক বিষয় হিসেবে দেখা উচিত।

এই নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য হলো—সমাজে অশ্লীলতা রোধ করা এবং নারীদের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button