ইতিহাস ও ঐতিহ্যচট্টগ্রাম বিভাগ

আজ দেবীদ্বার হানাদারমুক্ত দিবস, পাক হায়েনাদের আগ্রাসীর স্বাক্ষী ১৯ বীর শহীদদের গনকবর

অনুসন্ধানী প্রতিবেদক, কুমিল্লা: আজ ৪ ডিসেম্বর কুমিল্লার দেবীদ্বার হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেবীদ্বার পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় দেবীদ্বার। এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা সেই দিনগুলোতে ১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাস পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত রক্তক্ষয়ী হামলার জবাবে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল ধাপে ধাপে হানাদারমুক্ত হতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় দেবীদ্বার হানাদারমুক্ত হয় ৪ ডিসেম্বর। ওইদিন মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ সেতুটি মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস করে দেয়। মিত্রবাহিনীর ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের জেনারেল আর. ডি. হিরার নেতৃত্বে বৃহত্তর কুমিল্লায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। মিত্রবাহিনীর একটি ট্যাংক বহর বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া হয়ে দেবীদ্বারে প্রবেশ করলে রাতের আঁধারেই পাক হানাদাররা দেবীদ্বার ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসে পালিয়ে যায়।

মুক্ত এলাকার দিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা। তবে দেবীদ্বার থেকে চান্দিনা অভিমুখে যাওয়ার পথে মোহনপুর এলাকায় ভুল বোঝাবুঝির কারণে মিত্রবাহিনীর ট্যাংক বহরের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মিত্রবাহিনীর ছয় সেনা শহীদ হন। এইদিন দেবীদ্বারের আকাশে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা। হাজারো জনতা ও মুক্তিযোদ্ধার বিজয় উল্লাসে উপজেলা সদর প্রকম্পিত ও উল্লাসিত হয়ে ওঠে। দেবীদ্বার মুক্তিযুদ্ধের সময় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ছিল। কারণ খুব কাছেই ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সেনা-ছাউনি ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট। স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র পাঁচ দিন পরই এই অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পাক সেনাদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে ১৫ জন পাক সেনাকে হত্যা করেন এবং বাঙালি মুক্তি বাহিনীর যোদ্ধা শহীদ হন ৩৩ জন। এ অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামেই হানাদারদের নৃশংসতায় রক্তের দাগ আজও স্মৃতি চিহ্ন হয়ে রয়েছে। ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা-নেতাদের ভারত সীমান্তে পৌঁছে দেওয়ার নিরাপদ পথ ছিল দেবীদ্বার এলাকা। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য ফতেহাবাদের ‘নলআরাথ জঙ্গল এবং ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের এলাহাবাদের নিজবাড়িতে দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও গড়ে তোলা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যার দিক থেকে দেবীদ্বার ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধা অধ্যুষিত এলাকা। দেবীদ্বার অঞ্চলে পাক হানাদারদের বর্বরতার সাক্ষী হয়ে আছে ১৯ শহীদের গণকবর, ভূষনা ও বারুর গ্রামের শহীদদের কবর,পোনরা শহীদ আবুবকরের কবর ভিরাল্লার শহীদ মজিবুর রহমান খানের কবর, মহেশপুরের ১৪ মুক্তিযোদ্ধার কবর, বরকামতার ২৬ শহীদের কবর,মাওলানা আলীমুদ্দিন পীরের দুই নাতির কবরসহ অসংখ্য স্মৃতিস্তম্ভ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button