
নিজস্ব প্রতিবেদক: জেলা রেজিস্ট্রারের লিখিত নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে অবৈধভাবে হেবা দলিল রেজিস্ট্রির অভিযোগ উঠেছে জামালপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রারের (চলতি দায়িত্ব) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক নারী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও আদালতে পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রারের নাম আবু কালাম।
অভিযোগকারী মনিরা আক্তার জামালপুর শহরের দক্ষিণ কাচারিপাড়া এলাকার হারুন অর রশিদের মেয়ে। তিনি অভিযোগ করেন, তার মানসিক ভারসাম্যহীন বাবার টিপসহি নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে তার ভাই জমি আত্মসাৎ করেছেন, যাতে সহায়তা করেছেন খোদ সাব-রেজিস্ট্রার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মনিরা আক্তারের বাবা হারুন অর রশিদ দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রোকজনিত কারণে অসুস্থ এবং মানসিক ভারসাম্যহীন। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মনিরার ভাই মো. রাশেদুল ইসলাম (ময়না) গত ২৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে বাবাকে দিয়ে জোরপূর্বক টিপসহি নিয়ে একটি হেবা দলিল সম্পাদন করেন। অথচ ওই জমির ওপর একটি বাটোয়ারা মামলা চলমান রয়েছে। দলিলের মাধ্যমে বাড়ি ও দোকানপাটসহ মোট ২২ শতাংশ জমি নিজের নামে লিখিয়ে নেন রাশেদুল।
মনিরা আক্তার জানান, জালিয়াতির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তিনি আগেই বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছিলেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ও ১৯ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে তিনি জামালপুর সদর থানায় যথাক্রমে লিখিত অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরবর্তীতে ২২ অক্টোবর তিনি জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা রেজিস্ট্রার মো. আসাদুল ইসলাম অভিযোগপত্রে লাল কালি দিয়ে স্পষ্টভাবে লিখে দেন, “বিষয়টি পারিবারিকভাবে মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত উক্ত জমির দলিল সম্পাদন করা যাবে না।” কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার আবু কালাম সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ২০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে দলিলটি রেজিস্ট্রি করে দেন বলে অভিযোগ মনিরার।
অবৈধভাবে দলিল সম্পাদনের প্রতিকার চেয়ে মনিরা আক্তার গত ৫ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এছাড়া গত ৯ নভেম্বর তিনি জামালপুর জেলা জজ আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা (নম্বর: ২১২৯(১)/২৫) দায়ের করেছেন। পাশাপাশি দেওয়ানি মামলার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে জামালপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রার আবু কালামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। একইভাবে অভিযুক্ত রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জামালপুর জেলা রেজিস্ট্রার মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, “একটি লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি সাব-রেজিস্ট্রারকে লাল কালিতে নোট দিয়েছিলাম যে, পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলিলটি যেন সম্পাদন করা না হয়। কিন্তু এরপরও কীভাবে দলিলটি রেজিস্ট্রি হলো, তা খতিয়ে দেখা হবে।”
ভুক্তভোগী মনিরা আক্তার প্রশাসনের কাছে অবৈধ দলিল বাতিলসহ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।



