সুরা সেজদার তাৎপর্য: সেজদায় আব্দুল্লাহর শেষ নিশ্বাস
ইসলামিক ও জীবন ডেস্ক: শৈশবে যে তরুণ ছিল ইবাদতগুজার ও মসজিদমুখী, যৌবনের জৌলুসে সেই আব্দুল্লাহই একসময় হারিয়ে ফেলেছিল সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ। ব্যবসা, পার্থিব ব্যস্ততা আর বন্ধুদের আড্ডায় কুরআন ও জায়নামাজের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয় যোজন যোজন। কিন্তু মহান আল্লাহর হেদায়েত যার নসিবে থাকে, একটি মাত্র ঘটনা বা স্বপ্নই তার জীবন মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সুরা সেজদার আমল ও তাৎপর্য কীভাবে একজন পথহারা যুবককে পুনরায় আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত করল, তার এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত আব্দুল্লাহর জীবন।
ঘটনার সূত্রপাত এক রাতে। ক্লান্ত শরীরে ঘুমানোর পর আব্দুল্লাহ স্বপ্নে এক ভয়াবহ দৃশ্য দেখেন। আসমানজুড়ে নূরের ঝলকানি আর ফেরেশতাদের সারি। হঠাৎ গায়েবি আওয়াজ ভেসে আসে— “যাহারা দুনিয়াতে আমার সামনে সেজদা করেনি, আজ তারা সেজদা করতে সক্ষম হবে না।” স্বপ্নে আব্দুল্লাহ আপ্রাণ চেষ্টা করলেন সেজদা করার, কিন্তু তার শরীর যেন পাথর হয়ে গেছে। ভীতি ও অনুশোচনায় কাঁদতে কাঁদতে তার ঘুম ভেঙে যায়।
দীর্ঘদিন পর সেই ভোরেই তিনি ছুটে যান মসজিদে। ফজরের নামাজ শেষে ইমামের কাছে জানতে চান রাতে পঠিত সুরাটির নাম। ইমাম জানান, সেটি ছিল ‘সুরা সেজদা’। এই সুরার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে ইমাম বলেন, “যে ব্যক্তি অন্তরের গভীর থেকে এই সুরা শোনে এবং সেজদা করে, আল্লাহ তার অন্তর নরম করে দেন এবং মৃত্যুর সময় তার জবানে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জারি রাখেন।”
ইমামের কথাগুলো আব্দুল্লাহর হৃদয়ে তীরের মতো বিঁধল। তিনি উপলব্ধি করলেন, স্বপ্নটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা। সেদিনই তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন, আর কখনো পথভ্রষ্ট হবেন না এবং প্রতি রাতে সুরা সেজদা তিলাওয়াত করবেন।
এরপর কেটে গেছে বহু বছর। আব্দুল্লাহর জীবন এখন ইবাদতের আলোয় উদ্ভাসিত। এক রাতে সবাই যখন গভীর ঘুমে, আব্দুল্লাহ তখন সুরা সেজদা তিলাওয়াত করছিলেন। সুরার শেষ আয়াত— “তাদের পার্শ্ব বিছানা থেকে দূরে থাকে; তারা ভয়ে ও আশা নিয়ে আল্লাহকে ডাকে…” পাঠ শেষ করতেই তিনি সিজদায় লুটিয়ে পড়েন।
সেই সেজদাই ছিল তার জীবনের শেষ সেজদা। অত্যন্ত প্রশান্ত ও পবিত্র অবস্থায় তার আত্মা মহান রবের কাছে ফিরে যায়। সুরা সেজদার আমল ও আল্লাহর প্রতি বিনয় তাকে দান করেছিল ঈর্ষণীয় এক মৃত্যু বা ‘হুসনুল খাতিমাহ’।
এই ঘটনা প্রমাণ করে, সুরা সেজদা মানুষের অন্তরে বিনয় ও আল্লাহর নৈকট্য তৈরি করে। যে মস্তক আল্লাহর ভয়ে সেজদায় নত হয়, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেন। সেজদারত অবস্থায় মৃত্যু একজন মুমিনের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়।



