ইতিহাস ও ঐতিহ্যইসলাম ধর্মধর্ম ও জীবন

মিরাজের রাতে সুঘ্রাণ: ফেরাউনের দাসীর আত্মত্যাগের ঘটনা

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক: পবিত্র মিরাজের রজনীতে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর সঙ্গে ভ্রমণ করছিলেন, তখন এক জান্নাতি সুঘ্রাণ তাঁকে বিমোহিত করে। সেই মন মাতানো ঘ্রাণের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে জিবরাঈল (আ.) শোনান এক অকুতোভয় ঈমানদার নারীর আত্মত্যাগের কাহিনি। তিনি ছিলেন জালিম শাসক ফেরাউনের প্রাসাদের এক দাসী, যার ঈমানের দৃঢ়তা তাকে জান্নাতি মর্যাদা দান করেছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) মিরাজের রাতে জিবরাঈল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করেন, “হে জিবরাঈল! আমি নাকে কিসের এত চমৎকার সুঘ্রাণ অনুভব করছি?” উত্তরে জিবরাঈল (আ.) জানান, এই সুঘ্রাণ আসছে ফেরাউনের এক দাসী ও তার সন্তানদের কবর থেকে। এই দাসী ফেরাউনের কন্যার চুল আঁচড়ানোর কাজ করতেন।

ঘটনার সূত্রপাত হয় একটি চিরুনিকে কেন্দ্র করে। একদিন ফেরাউনের কন্যার চুল আঁচড়ানোর সময় দাসীর হাত থেকে চিরুনিটি পড়ে যায়। এটি তোলার সময় তিনি অবচেতন মনে ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে) বলে ওঠেন। ফেরাউনের কন্যা তখন প্রশ্ন করেন, “তুমি কি আমার বাবাকে বোঝাচ্ছ?” দাসী নির্ভীক কণ্ঠে উত্তর দেন, “না, আমি সেই আল্লাহর কথা বলেছি, যিনি আমার প্রভু, তোমার বাবার প্রভু এবং সমগ্র জাহানের প্রভু।”

এই সংবাদ ফেরাউনের কানে পৌঁছালে সে দাসীকে দরবারে তলব করে। ফেরাউন দম্ভভরে জিজ্ঞেস করে, “হে দাসী, তোমার প্রভু কে?” দাসী উত্তর দেন, “আল্লাহ, যিনি আমার প্রভু এবং তোমারও প্রভু।” এই উত্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে ফেরাউন তাকে শাস্তির হুমকি দেয়।

পরদিন ফেরাউন ওই দাসী ও তার সন্তানদের দরবারে হাজির করার নির্দেশ দেয়। ইবনে কাসির (রহ.)-এর বর্ণনা মতে, সেখানে একটি বিশাল কড়াইয়ে তেল ফুটছিল, যার নিচে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। ফেরাউন আবারও দাসীকে তার প্রভুর নাম জিজ্ঞেস করে। কিন্তু দাসী তার ঈমানে অটুট থেকে ‘আল্লাহ’-র নাম উচ্চারণ করেন।

এরপর শুরু হয় নির্মম নির্যাতন। চোখের সামনে দাসীর বড় সন্তানকে ফুটন্ত তেলে নিক্ষেপ করা হয়। মুহূর্তেই সন্তানটি হাড়-মাংস গলে তেলের সঙ্গে মিশে যায়। এরপর একে একে অন্য সন্তানদেরও একই পরিণতি ভোগ করতে হয়। তবুও ওই নারী এক চুল পরিমাণও ঈমান থেকে বিচ্যুত হননি।

সবশেষে যখন দাসীর কোলে থাকা দুগ্ধপোষ্য শিশুটিকে আগুনের কড়াইয়ে ফেলার উপক্রম হলো, তখন আল্লাহ তায়ালার কুদরতে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। ফুটন্ত তেলের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুটি বলে ওঠে, “মা, তুমি ভয় পেও না। ধৈর্য ধারণ করো, কারণ আমরা সত্যের ওপর আছি এবং জান্নাতে যাচ্ছি।”

শিশুর মুখে এমন কথা শুনে দাসী শেষবারের মতো চিৎকার করে ঘোষণা দেন, “আল্লাহই আমার ও তোমার একমাত্র প্রভু।” এরপর তাকেও ফুটন্ত তেলে নিক্ষেপ করা হয় এবং তিনি শাহাদাতবরণ করেন।

এভাবেই ফেরাউনের দাসী তার অটুট ঈমানের বিনিময়ে আল্লাহর কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদা লাভ করেন। মিরাজের রাতে রাসুল (সা.) যে সুঘ্রাণ পেয়েছিলেন, তা ছিল সেই মহীয়সী নারীর আত্মত্যাগেরই পুরস্কার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button