মনের আশা পূরণে ‘সালাতুল হাজাত’: নিয়ম ও বিশেষ দোয়া
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক: মানুষের জীবনে নানামুখী প্রয়োজন ও সংকট দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। ইসলামে বান্দার যেকোনো বৈধ প্রয়োজন মেটানোর জন্য মহান আল্লাহর সাহায্য চাওয়ার পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল। শরিয়তের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘সালাতুল হাজাত’ বা প্রয়োজন পূরণের নামাজ। এই নামাজ কোনো জটিল বা নির্দিষ্ট সংখ্যার ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং এটি সম্পূর্ণভাবে বান্দার বিশ্বাস, একাগ্রতা ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ওপর ভিত্তি করে।
বিপদ বা প্রয়োজনে নামাজ পড়ে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া সুন্নাহসম্মত আমল। বিশুদ্ধ হাদিসে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে। মুসনাদে আহমাদ-এর ১৬৯০০ নম্বর হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে, অতঃপর দুই রাকাত নামাজ পূর্ণ মনোযোগ সহকারে আদায় করে, আল্লাহ তাকে তার কাঙ্ক্ষিত বস্তু দ্রুত অথবা বিলম্বে দান করেন।”
তবে দোয়া কবুলের জন্য শর্ত হলো, বান্দাকে অবশ্যই আল্লাহর আনুগত্যশীল হতে হবে এবং হালাল পথে থাকতে হবে। নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা বা জটিল পদ্ধতির চেয়ে সাধারণ এই আমলের ওপর নির্ভর করাই উত্তম বলে মত দিয়েছেন ইসলামি স্কলাররা।
সালাতুল হাজাতের মূল ভিত্তি হলো আল্লাহভীতি বা তাকওয়া। পবিত্র কুরআনের সুরা ত্বালাকের ২-৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য (সংকট থেকে) বের হওয়ার পথ তৈরি করে দেন। আর তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।”
এছাড়া সুরা আরাফের ৯৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, জনপদের অধিবাসীরা ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বন করলে আসমান ও জমিনের বরকত উন্মুক্ত করে দেওয়া হতো। হাদিসেও (সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯) উল্লেখ আছে, যে ব্যক্তি অন্যের অভাব বা কষ্ট দূর করে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার কাজ সহজ করে দেন। গুহায় আটকে পড়া তিন ব্যক্তির ঘটনা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যারা সৎকর্মের ওসিলায় মুক্তি পেয়েছিলেন।
দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো খুশু-খুজু বা একাগ্রতা এবং হারাম উপার্জন থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ তায়ালা সুরা গাফির (৬০) ও সুরা বাকারায় (১৮৬) তাঁকে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাড়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পূর্ববর্তী নবীগণ যেমন—হজরত আইয়ুব, ইউনুস ও জাকারিয়া (আ.) বিনয় ও ভয়ের সাথে আল্লাহকে ডাকতেন বলেই তাদের দোয়া কবুল হয়েছিল (সুরা আম্বিয়া: ৯০)।
তাড়াহুড়ো করা দোয়া কবুলের অন্তরায়। হাদিসে (মুসনাদে আহমাদ: ৭১৪৫) বলা হয়েছে, বান্দা যতক্ষণ তাড়াহুড়ো না করে, ততক্ষণ তার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি পেটে হারাম খাবার থাকলে দোয়া কবুল হয় না।
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এক অন্ধ সাহাবিকে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য একটি বিশেষ আমল শিখিয়েছিলেন। সেটি হলো—উত্তমরূপে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়া এবং এরপর নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা। দোয়াটি হলো:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বিনাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যির রাহমাতি। ইয়া মুহাম্মাদু ইন্নি ক্বাদ তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা রব্বী ফী হা-জাতী হা-যিহী লিতুক্বদা-লী। আল্লাহুম্মা ফাশাফফি’হু ফিইয়্যা।
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এবং আপনার দয়ার নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে আপনার দিকে মনোনিবেশ করছি। হে মুহাম্মাদ, আমি আমার এই প্রয়োজন পূরণের জন্য আপনার মাধ্যমে আমার রবের দিকে মনোনিবেশ করেছি। হে আল্লাহ, আমার বিষয়ে তাঁর সুপারিশ কবুল করুন।”
বৈধ যেকোনো প্রয়োজনে মুমিনরা এই আমলটি করতে পারেন।



