জীবন থেকে ফুরিয়ে যাচ্ছে সময়, পরকালের জন্য আমরা কতটুকু প্রস্তুত?
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মানুষের জীবন থেকে প্রতিনিয়ত সবচেয়ে মূল্যবান যে সম্পদটি হারিয়ে যাচ্ছে, তা হলো ‘সময়’। এই সময়ের সঠিক মূল্যায়ন কেউ কেউ করতে পারেন, আবার অনেকেই অবহেলা ও পাপকাজে গা ভাসিয়ে তা নষ্ট করেন।
একই সময়ের ব্যবধানে কেউ হয়তো তিন ঘণ্টা ইসলামিক বই পড়ে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করছেন এবং নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন। ঠিক সেই সময়েই অন্য কেউ হয়তো অশ্লীল সিনেমা বা নাটক দেখে নিজের গুনাহের পাল্লা ভারী করছেন। অথচ বাস্তবতা হলো, জীবন থেকে প্রতিটি সেকেন্ড ঝরে যাওয়া মানেই আমরা কবরের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছি। ঘড়ির কাঁটার অবিরাম টিকটিক শব্দ যেন আমাদের কানে বার্তা পৌঁছে দেয়—‘আমি চলে যাচ্ছি, আমাকে মূল্যায়ন করো।’
সময়ের ব্যাপারে আমাদের অনেকেরই কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত সময় সুনির্দিষ্ট, যা এক মুহূর্তও কমবেশি করা হবে না। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:
‘বল, আমি নিজের ক্ষতি বা উপকারের অধিকার রাখি না, তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন। প্রত্যেক উম্মতের রয়েছে নির্দিষ্ট একটি সময়। যখন এসে যায় তাদের সময়, তখন এক মুহূর্ত পিছাতে পারে না এবং এগোতেও পারে না।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৪৯)
সময় মহান আল্লাহর দেওয়া এক অমূল্য নেয়ামত। এই সময় আপনি কীভাবে ব্যয় করছেন—আল্লাহকে খুশি করার জন্য, নাকি গান-বাজনা, মুভি দেখা আর অবৈধ প্রেমের পেছনে রাত জেগে নষ্ট করছেন? মনে রাখবেন, এই সময়ের হিসাব অবশ্যই দিতে হবে। পরকালে আল্লাহ প্রশ্ন করবেন:
‘বছরের হিসাবে তোমরা যমীনে কত সময় অবস্থান করেছিলে?’ (সুরা আল মুমিনুন, আয়াত: ১১২)
সেদিন পাপীদের অনুশোচনার অন্ত থাকবে না। কুরআনের বর্ণনায় এসেছে:
‘যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন পাপীরা শপথ করে বলবে যে, তারা মুহূর্তকালের বেশি অবস্থান করেনি।’ (সুরা রূম, আয়াত: ৫৫)
আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুযোগ দেন যাতে সে পাপ থেকে ফিরে আসতে পারে। সুরা নূহের ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেবেন; আল্লাহর নির্ধারিত সময় আসলে কিছুতেই তা বিলম্বিত করা হয় না, যদি তোমরা জানতে!’
মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় অত্যন্ত সন্নিকটে, তবুও মানুষ মোহে পড়ে উদাসীন হয়ে আছে। (সুরা আল আম্বিয়া: ০১)।
ছোটবেলায় আমরা একটি প্রবাদ পড়তাম—‘Time and tide wait for none’ অর্থাৎ ‘সময় ও নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।’ তাই সময়ের স্রোত ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই তাকে কাজে লাগানো বুদ্ধিমানের কাজ। আমাদের উচিত অবহেলা না করে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জনে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করা।



