নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে সচরাচর ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতেই মেরুকরণ দেখা যায়। কে কোন দলের হয়ে লড়বেন, তা অনেক সময় নির্ধারিত হয় তার ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ে। তবে সেই দীর্ঘদিনের প্রথা ও মনস্তাত্ত্বিক দেয়াল ভেঙে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। খুলনা-১ আসনে দলটির প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা কৃষ্ণ নন্দী।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী কৃষ্ণ নন্দী দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে রয়েছেন। এর বাইরে তাঁর আরেকটি বড় রাজনৈতিক পরিচয় হলো, তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির সভাপতি। সাংগঠনিক দক্ষতা এবং স্থানীয় জনসম্পৃক্ততার কারণে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে দলটির পক্ষ থেকে তাকে দাকোপ ও বটিয়াঘাটা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনের জন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়।
ইসলামি ভাবাদর্শের একটি দলের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাউকে মনোনয়ন দেওয়াকে রাজনীতির বিশ্লেষকরা ‘নান্দনিক পরিবর্তন’ হিসেবে দেখছেন। বিষয়টিকে অধ্যাপক এম এ বার্ণিক রাজনৈতিক প্রগতিশীলতার সূচনা বলে অভিহিত করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দলটি মূলত তিনটি বার্তা দিতে চেয়েছে—রাজনীতিতে ধর্মীয় সংকীর্ণতা পরিহার করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আস্থা স্থাপন এবং দলীয় কাঠামোতে বৈচিত্র্য আনা। এটি কেবল একটি মনোনয়ন নয়, বরং অধিকার ও উন্নয়নের রাজনীতিতে সবাইকে শামিল করার একটি প্রয়াস।
নির্বাচনী মাঠেও দেখা যাচ্ছে ভিন্ন এক চিত্র। শীতের সকালে বটিয়াঘাটার মেঠোপথে কৃষ্ণ নন্দীর প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ভোটারদের উদ্দেশে কৃষ্ণ নন্দীর স্পষ্ট উচ্চারণ, “ধর্ম আমাকে ধারণ করে, কিন্তু রাজনীতি মানুষের জন্য। আমি মানুষের ধর্মের নই, বরং মানুষের প্রতিনিধি হতে চাই।” তাঁর এই কথায় স্থানীয় নারীদের মুখেও শোনা যাচ্ছে সম্প্রীতির সুর—“ধর্ম ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু জমিন তো একটাই।”
কৃষ্ণ নন্দীর এই মনোনয়ন বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতিতে এক বড় বিবর্তন। এটি প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়ে যোগ্যতা, অংশগ্রহণ ও মানবিকতাই রাজনীতির মূল মাপকাঠি হওয়া উচিত। এই ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চায় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।



