অনুসন্ধানঅপরাধচট্টগ্রামদুর্নীতিদেশবিশেষ প্রতিবেদন

নগরীতে পুলিশের ইশারায় ‘ক্যাশিয়ার’ অলি উদ্দিনের দৌরাত্ম্য (অনুসন্ধানী- পর্ব ১)

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারকারী কথিত ক্যাশিয়ার অলি উদ্দিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, শ্রমিকদের ত্রাণ আত্মসাৎ থেকে শুরু করে কিশোর গ্যাং পরিচালনার মতো নানা অভিযোগ উঠেছে। হঠাৎ কোটিপতি বনে যাওয়া এই অলি উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী,শ্রমিক,সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

একসময় মাত্র ৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে শহরে এসে দিনমজুরের কাজ করা অলি উদ্দিন অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে গড়ে তুলেছেন ৮০/৯০ লাখ টাকার সম্পদ। রয়েছে ট্রাক, টেম্পু, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন ও ব্যাংক একাউন্টভর্তি টাকা। বর্তমানে নগরীর মাদারবাড়ি এলাকায় বহুতল ভবনে পরিবারসহ থাকেন তিনি।

থানার ক্যাশিয়ার পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগের শেষ নেই এই অলিউদ্দিনের বিরুদ্ধে,অলি উদ্দিন বিভিন্ন সময় দুটি থানার ‘ক্যাশিয়ার’ পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদা আদায় করছেন,এমন অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। আবার চাপের মুখে পড়লে তিনি নিজেকে চট্টগ্রাম হালকা মোটরযান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দেন।সংগঠনটি আওয়ামী লীগের প্রভাবিত; তবে এখন তিনি নিজেকে বিএনপির বড় নেতা পরিচয় দিয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়া নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো:সেলিম মিয়া বলেন,অলি উদ্দিন যদি আমাদের সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করেন, সংগঠন কোনো দায় নেবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অলির বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের হুমকি, গালিগালাজ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাও ঘটেছে। তার অপকর্ম নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করলে থানার সোর্স ও অপসাংবাদিকদের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করেন তিনি। সমঝোতা না হলে নেমে পড়েন খোঁজাখুঁজি ও ভয় দেখানোতে। এসবের প্রমাণ হিসেবে একটি অডিও ক্লিপ আমাদের হাতে রয়েছে।ব্যাপারটি নিয়ে এক সাংবাদিক জীবনের নিরাপত্তায় আদালতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বাধ্য হন।২০২০ সালে কোভিড-১৯ চলাকালে পাহাড়তলীতে শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ ত্রাণ নিজের নামে তালিকা পরিবর্তন করে আত্মসাৎ করেন-এমন অভিযোগ শ্রমিকদের। এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সহযোগী চক্র: বলাৎকার আরিফ-নিজাম বাহিনী বর্তমানে মৃত সারোয়ার বাবলা নাম বিক্রয় করে অলিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চক্র। বায়েজিদের ‘বলাৎকার আরিফ’ ও কোতোয়ালি এলাকার কথিত সাংবাদিক স্বর্ণ-ছিনতাইকারী নিজাম তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। নিজাম জাতীয় দৈনিক মুক্ত খবর পত্রিকার নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করে বেড়ান। সম্প্রতি স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হলেও অল্প দিনেই বেরিয়ে আবার চাঁদাবাজিতে নেমেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।স্থানীয়রা বলেন, ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালাতে অলি-নিজাম চক্রকে নিয়মিত টাকা দিতে হয়। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে ভয়ভীতি ও মামলা দেওয়ার হুমকি আসে।মানববন্ধন বন্ধে তিন লাখ টাকার রফাদফা

সম্প্রতি আকবর শাহ এলাকায় অলি-নিজাম চক্রের বিরুদ্ধে বাসিন্দারা মানববন্ধনের উদ্যোগ নিলে আনোয়ার টিভির তিন কথিত সাংবাদিক বিষয়টি অলি উদ্দিনকে জানায়। পরবর্তীতে তিন লাখ টাকার রফাদফায় বন্ধ হয়ে যায় মানববন্ধন-এমন অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
বহু মামলা, রাজনৈতিক রূপান্তর, প্রভাবশালী অবস্থান,নগরীর কোতোয়ালি থানায় অলি উদ্দিনের নামে ভাঙচুর-লুটপাট মামলা (নং–২১) রয়েছে। পাশাপাশি অতীতে বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে বালু ফেলা সংঘবদ্ধ ট্রাক-শোডাউনেও তার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে যানবাহন গিয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আগে নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী দাবি করলেও বর্তমানে তিনি বিএনপির বড় নেতা সেজে রাজনৈতিক পরিচয় পাল্টিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ।

একাধিক অভিযোগ জানালেও অ্যাকশন নেই প্রশাসনের,স্থানীয়রা বলছেন, অলি উদ্দিনের অপকর্ম সম্পর্কে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত থাকলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে চক্রটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। স্থানীয় ও সচেতন মহল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ দাবি এ সময় সচেতন মহল বলছে, অলি উদ্দিন-নিজাম চক্রকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নগরীতে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদকব্যবসা ও চোরাচালান আরও বিস্তার লাভ করবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর শাহ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আরিফুর রহমান আমাদের প্রতিবেদককে বলেন আমি অলি উদ্দিন নামের কাউকে চিনিনা, তবে আমার এলাকায় যদি কোন ধরনের অপকর্ম কেউ করে থাকেন তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button