এস আলম গ্রুপ ও জনতা ব্যাংকের ৩৪ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা

অপরাধ বিচিত্রা ডেক্স :চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ রবিবার (৭ ডিসেম্বর) এস আলম গ্রুপ ও জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ১,৯৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)এ মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি সংস্থার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক বাদী হয়ে দায়ের করেন।
দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পরের সঙ্গে যোগসাজশ করে বেআইনিভাবে ঋণের সীমা অনুমোদন করেছেন, ঋণের শর্ত লঙ্ঘন করেছেন এবং অতিরিক্ত ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড দায় তৈরি করেছেন। এর ফলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটি বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
প্রধান আসামিদের মধ্যে রয়েছেন:
গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড: ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল আলম, পরিচালক ফারজানা বেগম, মোহাম্মদ আবদুস সবুর, মো. শহিদুল আলম, মো. সাইফুল আলম, মো. ওসমান গনি
জনতা ব্যাংক: সাবেক এমডি ও সিইও মো. আব্দুস ছালাম আজাদ, সাবেক চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমান, সাবেক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কামরান আহসান, শহিদুল হক, মাশফিউল বারী, কামরুজ্জামান খান, আব্দুল জব্বার, তাজুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন
এছাড়া দুই ইনস্পেকশন এক্সিকিউটিভ খন্দকার রবিউল হক ও খন্দকার জহিরুল হকও আসামি করা হয়েছে। আসামিরা ব্যাংকিং বিধি ও অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে ঋণের অনুমোদন ও নবায়ন করেছেন। মার্জিন মানি ছাড়া এলটিআর (লেটার অব ট্রাস্ট রিসিপ্ট) ইস্যু করা হয়েছে, আলাদা চার্জ ডকুমেন্ট খোলা হয়নি এবং আমদানিকৃত পণ্য যাচাই করা হয়নি।
তদন্তে আরও দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছ থেকে নন-জুডিশিয়াল অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়নি এবং গুদামে থাকা পণ্যের বিমা কাভারেজ নিশ্চিত করা হয়নি। অনুমোদিত ঋণের শর্ত ভঙ্গ করে গ্রাহকের প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ গ্রহণ করেছে। বন্ধকির মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে এবং অপর্যাপ্ত জামানতের বিপরীতে ঋণ ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। ঋণের অর্থ গ্রুপ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে দুদক জানিয়েছে, এসব অনিয়ম ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড উভয় ক্ষেত্রেই ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অননুমোদিত এলটিআর দায় সৃষ্টি, নির্ধারিত সময়ে অর্থ জমা না দেওয়া এবং বিশ্বাসজাত দায়িত্ব (ফিডুসিয়ারি) লঙ্ঘন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এসব লেনদেন ২০১০ সাল থেকে শুরু হয়েছে। ঘটিত আর্থিক ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এবং অর্থের প্রবাহ শনাক্ত করতে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলমান, এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ শেষে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংক প্রায় ১,৯৬৩ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের অভিযোগে মামলা করেছিল। গত ১৪ বছরে গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে প্রায় ৯,৭০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার সামান্য অংশই পরিশোধ হয়েছে।



