পলাতক খুনিকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের মাঠে আবু সুফিয়ান! চট্টগ্রাম-৯ এ ক্ষোভে ফুঁসছে বাকলিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক:চট্টগ্রাম-৯ সংসদীয় আসনে নির্বাচন ঘিরে যখন সাধারণ ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী প্রত্যাশা করছেন, ঠিক তখনই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর মনোনীত প্রার্থী চট্টগ্রাম ৯ আসনের আবু সুফিয়ানের নির্বাচনী প্রচারণায় দুই দশকের পলাতক খুনি ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোরশেদ খানের প্রকাশ্য উপস্থিতি এলাকায় চরম ক্ষোভ, আতঙ্ক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছে। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ও দীর্ঘদিন ধরে পলাতক আসামিকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামায় প্রার্থীর রাজনৈতিক নৈতিকতা, জননিরাপত্তা ভাবনা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দক্ষিণ বাকলিয়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানের একাধিক কর্মসূচিতে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন মোরশেদ খান। এলাকাবাসীর দাবি, মোরশেদ খান দক্ষিণ বাকলিয়ার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, যিনি হত্যা ও সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট একাধিক মামলার আসামি এবং প্রায় দুই দশক ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে পলাতক জীবন যাপন করে আসছেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, মোরশেদ খান অতীতে বিএনপি সরকারের আমলে আলোচিত ‘ক্রসফায়ার’ সংক্রান্ত ঘটনার আসামি ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ থাকলেও আজও তিনি আইনের আওতার বাইরে রয়ে গেছেন। এমন একজন ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
অত্র এলাকারনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,আমরা অবাক এবং আতঙ্কিত। মোরশেদ খানের মতো একজন ভয়ংকর ও পলাতক খুনিকে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের নিরাপত্তার কোনো মূল্য নেই। একজন প্রার্থী যদি অপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে ভোট চাইতে আসেন, তাহলে সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়?
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, বহিরাগত প্রার্থী হিসেবে আবু সুফিয়ান এলাকাবাসীর মতামত ও অনুভূতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করছেন। তাদের মতে, জনগণের ওপর ভরসা না রেখে সন্ত্রাসী শক্তিকে ব্যবহার করাই প্রমাণ করে যে প্রার্থী জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই ঘটনাটি শুধু রাজনৈতিক ভুল নয়, বরং বাকলিয়াবাসীর প্রতি চরম ঔদ্ধত্যের বহিঃপ্রকাশ। তারা বলছেন, একজন জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে যিনি এলাকার মানুষের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে অগ্রাধিকার দেন না, বরং অপরাধীদের পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেন,তিনি কিভাবে জনগণের প্রতিনিধি হন, সেটাই বড় প্রশ্ন।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই ঘটনা আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে থাকা পূর্ববর্তী বিতর্কেরই ধারাবাহিকতা। বিএনপির সাবেক বহিষ্কৃত নেতা হিসেবে তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপসংক্রান্ত অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। এসব অভিযোগের মধ্যেই পলাতক খুনিকে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামায় তার ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
একজন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা বলেন,এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে, বিতর্কিত শক্তিকে আশ্রয় করে রাজনৈতিক অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে আবু সুফিয়ানের নির্বাচনী কার্যালয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রার্থীর এই নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও সন্দেহজনক করে তুলেছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ঘটনা চট্টগ্রাম-৯ আসনের নির্বাচনী পরিবেশকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। একজন পলাতক ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অবিলম্বে নির্বাচন কমিশন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের দাবি,পলাতক আসামির প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অন্যথায় নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা ও অস্থিরতা বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয়দের স্পষ্ট বক্তব্য,ভোট চাইতে হলে মানুষের কাছে আসতে হবে, অপরাধীদের নয়।



