
নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কঠোর নির্দেশনা উপেক্ষা করে (দুদকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জব্দ হিসাব থেকে ১০০ কোটি টাকা সরাইলেন মাসুদ আলম) এই শিরোনামে- ‘ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আলমের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও ব্যাংক থেকে জব্দ করা ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে “অপরাধ বিচিত্রা” পত্রিকার অনলাইন ভার্সন নিউজ পোর্টালে, (গত ৬ জানুয়ারি- ২৫ ইং) সংবাদ প্রকাশ প্রকাশ করা হয়, উক্ত সংবাদের জের ধরে সরাসরি সম্পাদক এস এম মোর্শেদকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন, গত ১২-১২-২৫ইং বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১১ ঘটিকায় (০১৭৬৫০০০০০৩) এই নাম্বার থেকে।
বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করিয়া রাখার জন্য একান্ত প্রয়োজন বিধায়, মতিঝিল মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করা হয়, জিডি নং ১১৮৪, তারিখ ১৪-১২-২০২৫ ইং। দুর্নীতিবাজ মাসুদ আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করার জন্য উল্টো দারুস সালাম মডেল থানায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, সেই মামলায় অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকার সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা, এস এম মোর্শেদ সাহেব নাম্বার আসামি করা হয়। বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতারা।
অজ্ঞত ব্যক্তি উপরোক্ত Whatsapp নাম্বার দিয়ে কল করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও অনলাইন থেকে সংবাদটি সরিয়ে ফেলার হুমকি প্রদান করেন নিউজ ওয়েব সাইট থেকে না সরালে দেখে নিবে বলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন, অপরদিকে মোটা অংকের অবৈধ কাল টাকার বিনিময় পত্রিকার ওয়েবসাইট থেকে নিউজ মুছে দেওয়ার বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন, মূলত নিউজটি ওয়েবসাইট থেকে তুলে না নেওয়ার কারণেই প্রাণনাশের হুমকি দেন মাসুদ আলমের লোকজন।সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত মাসুদ আলমের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের তোয়াক্কা না করে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরের ঘটনায় ব্যাংক পাড়া ও প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
এদিকে মাসুদ আলমের শতকোটি টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে, জাতীয় পত্রিকা সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিউজ ছাপা হয়, কয়েকটি গনমাধ্যমের নাম তুলে ধরা হলো- দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক আজকের পত্রিকা, দৈনিক ভয়েস নিউজ, ডেইলি সান বাংলা, দৈনিক সময়ের কন্ঠ, অনলাইন অনলাইন অ্যাক্টিভেট সাংবাদিক নাজমুস সাকিব, সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যম, দৈনিক অগ্রযাত্রা প্রতিদিন, ক্রাইম সিক্রেট ডট কম, দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ, জনতার মাধ্যম ডট কম, উদয়ের পথে, দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি সহ সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা। তবে পরবর্তীতে দৈনিক আমাদের মাতৃভূমি পত্রিকার সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কর্তৃক প্রতিবাদ নিউজ ছাপান ৬ দিনের মাথায়।
ব্যবসায়িক জগতে মাসুদ আলম ‘প্রমিস গ্রুপ’-এর কর্ণধার হিসেবে পরিচিত। এর আগে ‘নগদহাট বাংলাদেশ লিমিটেড’ নামে এমএলএম ব্যবসা খুলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে নাম বদলে ‘প্রমিস মার্ট’, ‘প্রমিস অ্যাসেট’, ‘প্রমিস টেক’সহ প্রায় ১৫টি কোম্পানি খুলে তিনি একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। মাসুদ আলমের অতীত ঘেঁটে জানা যায়, তিনি একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তার বিরুদ্ধে উসকানি, হত্যা এবং সরকারি সম্পদ ধ্বংসের অভিযোগে প্রায় ৭০টি মামলা রয়েছে।
এমনকি গণহত্যার মতো গুরুতর অভিযোগে তার নাম আসা সত্ত্বেও তিনি নতুন সরকারের আমলে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন, যা প্রশাসনের অভ্যন্তরেও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রকল্পের আওতায় দুই দফায় মোট ৪৮ কোটি টাকা (প্রতি ধাপে ২৪ কোটি) বিল হিসেবে মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। যদিও সন্দেহজনক লেনদেনের কারণে দুদক ও বিএফআইইউ আগেই মাসুদ আলম, তার স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ৩০ জুন ও ৩০ সেপ্টেম্বর ভিত্তিক জমাকৃত বিলের টাকা অত্যন্ত কৌশলে উত্তোলন করে নেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, উত্তোলিত অর্থের একটি বড় অংশ পলাতক সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং কারাগারে থাকা সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিনের কাছে পাচার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সিআর মামলা নং-৪৯৯/২০২৫ এবং দণ্ডবিধির ১৪৩, ১৪৭, ১৪৮, ৩২৬, ৩০৭, ১১৪ ও ১০৯ ধারাসহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জব্দ হিসাব থেকে টাকা বের করে নেওয়ার নজির খুব একটা দেখা যায় না। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণেই মাসুদ আলম এমন বেপরোয়া কাণ্ড ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠান ৩০০ কোটি টাকার একটি সরকারি প্রকল্প বাগিয়ে নিতে বর্তমান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার তৎকালীন এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রায় ১০ কোটি টাকা ঘুষ প্রদান করেছে। এছাড়া প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ খানের বিরুদ্ধেও অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব, ঘুষ ও উচ্চপর্যায়ের তদবিরের জোরেই গুণগত মানহীন একটি প্রতিষ্ঠানকে এত বড় প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে আইটি বিশেষজ্ঞদের মত। তার সম্পদের পরিমাণ নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা।
২০২৪ সালের এপ্রিলে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ার সময় তিনি যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, সেখানে তার নিট সম্পদ দেখানো হয় ৯ কোটি ৯৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা এবং বার্ষিক আয় মাত্র ২১ লাখ টাক তবে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধারণা করা হচ্ছে, তার প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ হলফনামার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তিনি কৌশলে বিপুল সম্পদ গোপন করেছেন। ইতোমধ্যে দুদক মাসুদ আলম ও তার স্ত্রীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পাশাপাশি দেশের সব ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চিঠি দিয়ে তাদের সম্পদের বিস্তারিত তথ্য তলব করা হয়েছে।
প্রমিস গ্রুপের সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেডের দাপ্তরিক ফোন নম্বরগুলো বন্ধ এবং কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। আইটি খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আগে থেকেই ভুয়া বিল ভাউচার, নিম্নমানের প্রশিক্ষণ এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। এরপরও বিতর্কিত এই প্রতিষ্ঠানকে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া এবং জব্দ হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দেওয়া রাষ্ট্রের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। এ বিষয়ে দুদক ও বিএফআইইউর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জব্দ হিসাব থেকে কীভাবে টাকা উত্তোলন করা হলো, তা খতিয়ে দেখতে ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তে সত্যতা মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



