অপরাধঅব্যাবস্থাপনাআইন-শৃঙ্খলাচট্টগ্রামজাতীয়রাজনীতি

আনোয়ারায় বিশটির অধিক অবৈধ বালু মহাল, প্রশাসনের নিরবতা নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ

নিজস্ব সংবাদদাতা: চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় প্রশাসনের নিরবতা ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অবৈধ বালু উত্তোলন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত বিশটির অধিক অবৈধ বালু মহাল থেকে দিন-রাত নির্বিঘ্নে বালু উত্তোলন করে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডের পেছনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জুইদন্ডী, বরুমছড়া, বরকল, ইছাখালী, গহিরা ও আশপাশের এলাকায় নদী, খাল ও চর থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ড্রেজার ও স্কেভেটর মেশিন ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে একদিকে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে নদীপাড়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। অনেক এলাকায় বসতভিটা ও কৃষিজমি হুমকির মুখে পড়েছে, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ।

সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, দিনের আলো থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে অবৈধ বালু উত্তোলন চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো অভিযান চোখে পড়ছে না। ফলে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয়দের দাবি, মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালিত হলেও তা অনেকটাই লোক দেখানো। অভিযানের আগেই সংশ্লিষ্টরা খবর পেয়ে যাওয়ায় মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বালু বহনকারী ট্রাক ও ডাম্পারের অবাধ চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত শব্দ ও ধুলাবালির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিও দিন দিন বাড়ছে।

এ বিষয়ে স্থানীয় পরিবেশবাদী ও সচেতন মহল দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে আনোয়ারা উপজেলায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে নিয়মিত ও কার্যকর প্রশাসনিক অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানান।

এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, অবৈধ বালু মহালের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অবস্থান কঠোর। শীঘ্রই অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে প্রশাসনের এমন আশ্বাসের পরও দ্রুত দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ হবে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা অবিলম্বে অভিযান জোরদার, জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button