লিভার রোগ এখন নীরব বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট, বাঁচতে প্রয়োজন সচেতনতা : মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন

এম এ মান্নান :লিভার রোগ বর্তমানে একটি নীরব কিন্তু ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ২০ লাখ মানুষ লিভার রোগে মারা যাচ্ছে, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৪ শতাংশ। বাংলাদেশে এ সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা এবং সচেতন জীবনযাপন।
রবিবার রেডিসন ব্লু হোটেল, চট্টগ্রাম বে ভিউয়ের মেজবান হল-এ আয়োজিত এসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অফ লিভার ডিজিজেজ (এএসএলবিডি) (Association for the Study of Liver Diseases Bangladesh (ASLDB)-এর ১৯তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক লিভার রোগ বিষয়ক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, বাংলাদেশে আনুমানিক ৮০ লাখ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত। পাশাপাশি নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে, যা বর্তমানে দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের মধ্যে বিদ্যমান। “এগুলো শুধু পরিসংখ্যান নয়—এগুলো জাতীয় উৎপাদনশীলতা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও অর্থনীতির ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে লিভার রোগ ইতোমধ্যে মৃত্যুর অষ্টম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত,”—যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের লিভার রোগ সংকটের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। অনিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে টিকাদানের ঘাটতি, দেরিতে রোগ শনাক্তকরণ এবং পর্যাপ্ত স্ক্রিনিংয়ের অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। অধিকাংশ রোগী সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারের মতো জটিল পর্যায়ে পৌঁছানোর পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
নগরায়ণের প্রভাব প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, দ্রুত নগরায়ণের ফলে জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন এসেছে। চট্টগ্রামের মতো মহানগরে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের হার বাড়ছে, যা সরাসরি মেটাবলিক ডিজঅর্ডার ও ফ্যাটি লিভার রোগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের মূল দায়িত্ব হলো প্রতিরোধ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাদান উৎসাহিত করা, প্রাথমিক স্ক্রিনিং ও কমিউনিটি আউটরিচ কার্যক্রম জোরদারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি এএসএলবিডি’র গবেষণা, বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের বৈজ্ঞানিক সম্মেলন কেবল একাডেমিক আয়োজন নয়; বরং এখান থেকেই তথ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নের ভিত্তি তৈরি হয়।
সমাপনী বক্তব্যে মেয়র বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDG)–৩ এর লক্ষ্য ৩.৩ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস নির্মূলে সরকার, চিকিৎসক সমাজ ও নাগরিক সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রতিকারমূলক চিকিৎসার বদলে আমাদের প্রতিরোধভিত্তিক স্বাস্থ্যনীতির দিকে অগ্রসর হতে হবে, যেন কোনো নাগরিক প্রতিরোধযোগ্য লিভার রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ না হারায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এএসএলবিডি’র সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. শাহিনুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত চিকিৎসকবৃন্দ।



