
নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিকে ১০ কোটি টাকার টেন্ডার বিতর্ক, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যাডার সংস্কৃতি ও সিন্ডিকেটের অভিযোগ—অন্যদিকে হঠাৎ আবির্ভাব এক ‘ধোয়া তুলসীপাতা’ নির্বাহী প্রকৌশলীর!
নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ ও তার পক্ষে প্রকাশিত একটি গৃহপালিত গণমাধ্যমের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক প্রতিবেদন এখন নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে— এই প্রতিবাদ কি সত্য উন্মোচন, নাকি দুর্নীতি ঢাকার শেষ চেষ্টা?
অভিযোগের জবাবে ‘কপি-পেস্ট’ আত্মরক্ষা! হারুন অর রশিদের পক্ষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে সবচেয়ে চোখে পড়ার বিষয়—বারবার বলা হয়েছে “কোনো সরকারি নথিতে অভিযোগ নেই” “কোনো তদন্ত হয়নি” “সব টেন্ডার পিপিআর মেনে হয়েছে”, কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মৌলিক প্রশ্ন হলো— দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই কি আগে সরকারি নথিতে মামলা থাকতে হয়? সংবাদ কি তদন্তের আগেই অপরাধ প্রমাণ করবে, নাকি তদন্তের পথ খুলবে? এই আত্মপক্ষ সমর্থন আসলে অভিযোগের জবাব নয়—বরং আইনগত শব্দচয়ন দিয়ে দায় এড়ানোর প্রচেষ্টা। ৬ টেন্ডার, ১ পরিবার, ১ দিন—এটা কি কাকতাল? প্রতিবাদী প্রতিবেদনে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্যটি—১০ মার্চ ২০২৫, একই দিনে ৬টি বড় প্রকল্পের টেন্ডার, ছয়টির ছয়টিই পেয়েছে আতিকুল ইসলামের স্ত্রীর মালিকানাধীন ‘অ্যাডরয়েড কনসাল্ট্যান্টস’।
প্রশ্ন হলো— e-GP থাকলেই কি সিন্ডিকেট অসম্ভব? একই পরিবার বারবার সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়াই কি স্বচ্ছতার প্রমাণ? অন্য ঠিকাদাররা তাহলে কোথায় গেল? এই প্রশ্নগুলোর কোনো জবাব নেই তথাকথিত ‘প্রতিবাদী প্রতিবেদনে’।
‘AI ছবি’ বলে উড়িয়ে দেওয়া অতীত কি মুছে যায়? হারুন অর রশিদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রতিবাদী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু এআই ছবি ও পোস্ট” কিন্তু বাস্তবতা হলো— আওয়ামী লীগের বিজয় মিছিলে উপস্থিতি, ছাত্রলীগ নেতাদের ফুলেল সংবর্ধনা, দলীয় কর্মসূচিতে সরাসরি অংশগ্রহণ, এসব কি AI দিয়ে বানানো? ফেসবুক পোস্ট কি কেবল ‘ছবি’, নাকি রাজনৈতিক অবস্থানের দলিল? নিষিদ্ধ সংগঠনের অতীত মুছে ফেলতে AI অজুহাত এখন নতুন কৌশল।
গৃহপালিত গণমাধ্যমের ভূমিকা : সাংবাদিকতা না সাফাই? প্রতিবাদী প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়— একটিও অনুসন্ধানী প্রশ্ন নেই, কোনো স্বাধীন সূত্র নেই, অভিযোগকারীদের বক্তব্য নেই, শুধু অভিযুক্তের ভাষ্য, তাও প্রায় হুবহু, এটি কি সংবাদ?
নাকি আইনি নোটিশের খসড়া?
একটি গণমাধ্যম যখন অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে “যুধিষ্ঠির” বানাতে ব্যস্ত, তখন সেটি আর সাংবাদিকতা থাকে না—তা হয়ে ওঠে দালালি। “তদন্ত নেই” যুক্তিই প্রমাণ করে কেন তদন্ত দরকার, হারুন অর রশিদের পক্ষে বলা হচ্ছে—“কোনো তদন্ত হয়নি, তাই অভিযোগ মিথ্যা”
কিন্তু বাস্তবে— তদন্ত না হওয়াই তো অভিযোগের মূল সংকট, সিন্ডিকেট থাকলেই তদন্ত থেমে যায়, ক্ষমতাবানদের বিরুদ্ধে নথি তৈরি হতে সময় লাগে,তাই প্রশ্ন— তদন্ত না হওয়াই কি নির্দোষতার সার্টিফিকেট ? নাকি তদন্ত থামিয়ে রাখাই সিন্ডিকেটের সাফল্য?
শেষ কথা: প্রশ্ন থেকেই যাবে এই প্রতিবেদন কোনো রায় নয়। এটি প্রশ্নের তালিকা। ১০ কোটি টাকার হিসাব, একদিনে ৬ টেন্ডার, পরিবারকেন্দ্রিক কাজ বণ্টন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অতীত এবং গৃহপালিত গণমাধ্যমের সাফাই,
সব মিলিয়ে প্রশ্ন একটাই— জুলাইয়ের রক্ত কি কেবল শাসক বদলের জন্য, নাকি ব্যবস্থার বদলের জন্যও? আর যদি ব্যবস্থাই না বদলায়— তাহলে হারুনরা বদলাবে কেন? এখন দায়িত্ব দুদক, প্রধান প্রকৌশলী, অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রকৃত সাংবাদিকদের। নিষিদ্ধ সিন্ডিকেটের এই ‘বিষবৃক্ষ’ উপড়ে ফেলা হবে, নাকি গৃহপালিত কলমেই ঢেকে রাখা হবে— সেটাই এখন দেখার বিষয়।



