শত যুদ্ধের ক্ষত, এক নিঃশব্দ বিদায়

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্কঃ খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন সাহাবি আবু দারদা (রা.) তাকে দেখতে গেলেন।
খালিদ রা. বললেন,
“হে আবু দারদা! যদি উমর মারা যান, তবে তোমরা এমন অনেক কিছু দেখবে যা তোমরা অপছন্দ করবে।”
আবু দারদা বললেন, “আল্লাহর কসম, আমিও তাই মনে করি।”
খালিদ রা. তখন তার মনের কথা খুলে বললেন,
“উমরের প্রতি আমার মনে কিছু অভিমান ছিল। তিনি আমার সম্পদ ভাগ করেছিলেন, এমনকি আমার জুতো জোড়া পর্যন্ত ভাগ করেছিলেন। কিন্তু এখন এই অসুস্থ অবস্থায় চিন্তা করে বুঝলাম, উমর যা করেছেন, সব আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করেছেন।”
“তিনি আমার সাথে কঠোর ছিলেন, কিন্তু বদরী সাহাবিদের সাথেও তিনি এমনই কঠোর ছিলেন। আমি আত্মীয়তার খাতিরে তার কাছে ছাড় আশা করেছিলাম, কিন্তু তিনি আল্লাহর ব্যাপারে কারো আত্মীয়তা বা নিন্দার পরোয়া করেন না।”
“তিনি আমাকে সেনাপতির পদ থেকে বরখাস্ত করেছিলেন। পরে শুনলাম, তিনি আমার চেয়েও উত্তম ব্যক্তি, রাসূল (সা.)-এর মামা সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.)-কেও বরখাস্ত করেছেন। তখন আমার মন থেকে সব ক্ষোভ দূর হয়ে গেল।”
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) বললেন,
“আমি মারা গেলে আমিরুল মুমিনীন উমর (রা.)-কে জানিও যে, আমি আমার অসিয়ত, সম্পদ, আমার মেয়েদের দায়িত্ব এবং আমার প্রতিশ্রুতি পালনের ভার তার ওপরই ন্যস্ত করে গেলাম।”
এরপর তিনি উঠে বসলেন এবং বললেন,
“যে রাতে আমার ঘরে কোনো প্রিয় নববধূর আগমন ঘটে, সেই রাত আমার কাছে ততটা প্রিয় নয়, যতটা প্রিয় সেই কনকনে শীতের রাত, যখন আমি সকালে শত্রুর ওপর আক্রমণের অপেক্ষায় থাকি।”
তিনি নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে আক্ষেপ করে বললেন,
“আমি শত শত যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আমার শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তলোয়ার, তীর বা বর্শার আঘাতের চিহ্ন নেই। অথচ আজ আমি বিছানায় শুয়ে উটের মতো স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করছি! “
খালিদ (রা.)-এর মৃত্যুর খবর শুনে খলিফা উমর (রা.) শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়লেন। তিনি বারবার বলতে লাগলেন, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
তিনি মাথা নিচু করে বললেন,
“ইসলামে এমন এক ফাটল ধরল যা আর কখনো জোড়া লাগবে না। আল্লাহর কসম! খালিদ ছিলেন শত্রুর বুকে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত এক দেয়াল। বনু মাখজুমের নারীদের অধিকার আছে খালিদের জন্য কাঁদার। খালিদের মতো বীরের জন্যই তো ক্রন্দনকারীরা কাঁদে।”
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.) কেন যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হলেন না? আলেমরা বলেন,
“খালিদকে রাসূল সা. ‘সাইফুল্লাহ’ (আল্লাহর তলোয়ার) উপাধি দিয়েছিলেন। আর আল্লাহর তলোয়ার কখনো যুদ্ধে ভাঙতে বা হারতে পারে না। তাই তার মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে, যাতে প্রমাণিত হয়, আল্লাহর তলোয়ার অপরাজেয়।”
(সূত্র: সিয়ারু আলামিন নুবালা,আল-কামিল ফিত তারিখ – ইবনে আসির)



