আইন-শৃঙ্খলাপ্রশাসন

হাদি হত্যার বিচারে অচল চট্টগ্রাম

মুহাম্মদ জুবাইর

হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে শাহ আমানত সেতু অবরোধ ইনকিলাব মঞ্চের বিক্ষোভে অচল চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি
হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন সংগঠনটির নেতা কর্মীরা। রোববার ২৮ ডিসেম্বর দুপুর ২টা থেকে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষা শাহ আমানত সেতু এলাকায় শুরু হয় এই কর্মসূচি।বিক্ষোভকারীরা সেতুর প্রবেশমুখে অবস্থান নিলে মুহূর্তের মধ্যেই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী এবং কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী মহাসড়ক কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এতে তীব্র যানজটে আটকা পড়ে হাজারও বাস ট্রাক মাইক্রোবাস এবং ব্যক্তিগত গাড়ি। ভোগান্তিতে পড়েন নারী শিশু ও বয়স্কসহ সাধারণ যাত্রীরা।

শাহ আমানত সেতুর প্রবেশমুখ জুড়েই তখন একটাই আওয়াজ। বিচার বিচার চাই।হাদি হত্যার বিচার চাই। জাস্টিস জাস্টিস উই ওয়ান্ট জাস্টিস।আমরা সবাই হাদি হব।যুগে যুগে লড়ে যাব।এমনসব স্লোগানে পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল বিভিন্ন ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড এবং ব্যানার।সেগুলোতে লেখা ছিল হাদি হত্যার বিচার চাই।খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।হত্যাকারীদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ইনকিলাব মঞ্চের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা অংশ নেন।তারা রাস্তার উপর বসে থাকা অবস্থাতেই একের পর এক বক্তব্য রাখেন।বক্তারা বলেন শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের পর বেশ কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনো মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।প্রশাসনের এমন নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং উদ্বেগজনক। তারা প্রশ্ন তোলেন একটি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ যে সরকার তাদের কাছে জনগণ কীভাবে ন্যায়বিচার আশা করবে।

বক্তারা আরও বলেন হাদি কেবল একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন না।তিনি ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের একটি ভাবাদর্শিক প্ল্যাটফর্মের কণ্ঠস্বর। তিনি ছিলেন প্রতিবাদের প্রতীক। তাকে সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে জনমতের কণ্ঠরোধ করার নীলনকশা তৈরি করা হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু তদন্তের কোনো অগ্রগতি জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়নি। যারা হত্যা করেছে তারা এখনও逍遥 করে বেড়াচ্ছে। এটি কেবল একটি ব্যক্তিকে হত্যার ঘটনা নয়। এটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার একটি অপচেষ্টা।

তারা অভিযোগ করে বলেন একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ যে সরকার তাদের পক্ষে একটি সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করাও সম্ভব নয়। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা যখন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না তখন সেই সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়।বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন অবিলম্বে হাদি হত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। প্রয়োজনে সারাদেশে একই ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিক্ষোভকারীরা বলেন শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন সৎ নির্ভীক এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার এক তরুণ নেতা। তার হত্যার বিচার না হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে না।আজ যদি হাদির হত্যার বিচার না হয় কাল অন্য কারও জীবনও নিরাপদ থাকবে না।তাই এই দাবি কেবল ইনকিলাব মঞ্চের নয় এটি জনগণের দাবি। ন্যায়বিচারের দাবি।

অবরোধ কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।অনেক যাত্রীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে গাড়ির ভেতরে বসে থাকতে দেখা যায়।বিশেষ করে ঢাকা চট্টগ্রাম কক্সবাজার রুটের দূরপাল্লার বাসগুলো দীর্ঘ সময় চলতে না পেরে থেমে থেমে দাঁড়িয়ে থাকে।এতে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভোগান্তিতে পড়েন রোগী শিশু এবং বৃদ্ধ যাত্রীরা।কেউ কেউ বাধ্য হয়ে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন।

যানজট নিরসনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ তৎপরতা শুরু করে।শাহ আমানত সেতুতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা যানবাহনগুলোকে ধীরে ধীরে সেতু এবং সংযোগ সড়ক থেকে সরিয়ে বিকল্প সড়কে পাঠানোর চেষ্টা চালান।এসময় পুলিশ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব পালন করে।চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি ট্রাফিক দক্ষিণ মোহাম্মদ লিয়াকত আলী খান সাংবাদিকদের জানান যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করছে।এই সড়কে চাপ কমাতে চালকদের কালুরঘাট সেতু এবং কর্ণফুলী টানেল ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।তিনি আশা প্রকাশ করেন দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

উল্লেখ্য এর আগের দিন শনিবার ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায়ও হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে একই ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ইনকিলাব মঞ্চ।সেখানে থেকেও তারা খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানায় এবং বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

হাদি হত্যাকাণ্ড ঘিরে চট্টগ্রামজুড়ে এখনো চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র।তিনি বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সংগঠনের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন একটি পরিকল্পিত নীলনকশার অংশ হিসেবেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।তবে এখনো পর্যন্ত তার হত্যার তদন্ত ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে সন্তোষজনক অগ্রগতি তারা দেখতে পাচ্ছেন না।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর সাধারণ মানুষ বলছেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ও বিক্ষোভ গণতান্ত্রিক অধিকারের অংশ হলেও সড়ক অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তৈরি হয়।বিশেষ করে দীর্ঘ যানজটে পড়লে রোগী পরীক্ষার্থী শিশু ও কর্মজীবী মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই এমন কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রেও যেন জনগণের দুর্ভোগ বিবেচনায় নেয়া হয়।

অপরদিকে ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা বলছেন তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে একাধিকবার দাবি তুলেছেন।কিন্তু দাবি বাস্তবায়নের লক্ষণ না দেখে তারা সড়কে নামতে বাধ্য হয়েছেন।তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এটি কোনো রাজনৈতিক প্রদর্শনের কর্মসূচি নয় বরং ন্যায়বিচারের জন্য মানবিক প্রতিবাদ।তারা জানিয়েছেন শান্তিপূর্ণ উপায়ে দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার বিকল্প থাকবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন হাদি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার না হলে এই ইস্যু আরও উত্তপ্ত হতে পারে।আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে।একারণে সরকারের উচিত খুব দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার এবং বিচার নিশ্চিত করা।এতে একদিকে যেমন ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি ন্যায়বিচার করা সম্ভব হবে অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আইনের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে।

জনগণের দাবি এখন একটাই।হত্যার বিচার হোক।খুনিরা আইনের আওতায় আসুক।আর এই দাবি ঘিরেই চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায় ইনকিলাব মঞ্চের নেতা কর্মীরা যে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন সেটি স্পষ্ট করে দিয়েছে জনগণ আর নীরব থাকতে চায় না। তারা ন্যায়বিচার চায়। আইনের শাসন চায়।

সবশেষে বলা যায় শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই কেবল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব। অন্যথায় এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।ন্যায়বিচারই পারে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে।আর সেই ন্যায়বিচারের পথেই এগিয়ে যেতে হবে রাষ্ট্রকে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button