সিদরাতুল মুনতাহা কী?
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্কঃ ‘সিদরাহ’ অর্থ কুল বা বরই গাছ আর ‘মুনতাহা’ অর্থ চূড়ান্ত সীমা। অর্থাৎ সিদরাতুল মুনতাহা হলো এমন একটি বিশেষ বরই গাছ, যা সপ্তম আকাশের শেষ সীমায় অবস্থিত।
এটিকে বলা হয় সৃষ্টিজগতের শেষ সীমা। এর পর আর কোনো ফেরেশতা বা সৃষ্টির পদক্ষেপ নেই। কেবল আল্লাহর অনুমতিতেই প্রিয় নবী (সা.) সেই সীমা অতিক্রম করেছিলেন।
হাদিসে সিদরাতুল মুনতাহাঃ সহিহ বুখারির বর্ণনায় নবীজি বলেন, “আমি সিদরতুল মুনতাহার কাছে গিয়েছিলাম, যা কিছু আচ্ছন্ন করেছিল জানি না। সেখানে সোনার প্রজাপতির মতো কিছু ছিল।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭৪৯৩)
সহিহ মুসলিমেও এসেছে, “সিদরাতুল মুনতাহার পাতা হাতির কান সমান, আর এর ফল ছিল বড় বড় কুমড়ার মতো।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৪)
এই বর্ণনা আমাদের ধারণা দেয় যে, এটি ছিল অলৌকিক এক বৃক্ষ, যা পার্থিব কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়।
তাৎপর্য কী?
১. ফেরেশতাদের সীমা: তাফসীরকার ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন—সিদরাতুল মুনতাহা হলো ফেরেশতাদের জ্ঞান ও দায়িত্বের শেষ সীমা। এর পর কী আছে তা কেবল আল্লাহ জানেন।
২. নবীজির বিশেষ মর্যাদা: প্রিয় নবীজিকে এই সীমার পরেও নেয়া হয়েছিল। এখানেই নবীজি (সা.) পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশ পান, যা পরে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করা হয়।
৩. জান্নাতুল মাওয়ার সান্নিধ্য: কোরআনে বলা হয়েছে—সিদরাতুল মুনতাহার কাছেই জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত। এটি সেই জান্নাত যেখানে শহীদ ও নেককার বান্দারা আশ্রয় পাবে।
(তাফসীর আত-তাবারী, দারুল মাআরিফ, কায়রো: ১৯৯৯, খণ্ড ২৭, পৃ. ৭৬)।
শিক্ষণীয় দিক
১. বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা: আমরা যত উন্নত হই, কিছু বিষয় আল্লাহর জ্ঞান ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়।
২. নবীজির মর্যাদা: সিদরাতুল মুনতাহা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, নবীজি আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় বান্দা।
৩. আমাদের কর্তব্য: মিরাজের উপহার হলো নামাজ। তাই সিদরাতুল মুনতাহার শিক্ষা হলো—নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
অনেক আলেম বলেন—সিদরাতুল মুনতাহা শুধু একটি গাছ নয়, বরং এটি হলো জ্ঞান ও সৃষ্টির সীমান্তরেখা। মানুষের ও ফেরেশতাদের বোধগম্যতা এখানে শেষ হয়, আর এর পর শুরু হয় কেবল আল্লাহর বিশেষ জ্ঞানের জগৎ।
আধ্যাত্মিক দিক থেকে বলা যায়, এটি এমন এক স্থান যেখানে সীমিতের সাথে অসীমের মিলন ঘটে।
