রাজনীতিসংস্কৃতি

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শহীদ জিয়া স্মৃতি জাদুঘর সংরক্ষণের আহ্বান

মুহাম্মদ জুবাইর

চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে সংস্কার করে সুরক্ষা ও সংরক্ষণের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।তাঁর মতে,এই জাদুঘর শুধু একটি স্থাপনা নয়,বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস ও রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যের অংশ।তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে হলে জাদুঘর ভবনটিকে দ্রুত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় আনা প্রয়োজন।

সোমবার তিনি নিজে সরেজমিনে গিয়ে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এই জাদুঘর ভবনের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন।এ সময় জাদুঘরের প্রশাসনিক-কাম-নিরাপত্তা কর্মকর্তা অর্পিতা দাশ গুপ্তা ভবনটির বর্তমান অবস্থা, ঝুঁকি ও বিভিন্ন সমস্যার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

পরিদর্শনের সময় দেখা যায়,জাদুঘর ভবনের কয়েকটি অংশে দৃশ্যমান ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।বিশেষ করে কিছু ওয়াল,বিম ও পিলারে ফাটলের চিহ্ন রয়েছে,যা ভবনের স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
মেয়র এসব চিহ্নিত অংশ খুব মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করেন এবং নোট নেন।পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,১১৩ বছরের পুরনো এই ভবন ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের ধারক,মেয়র ডা. শাহাদাত বলেন, এই ভবনটি প্রায় ১১৩ বছরের পুরনো।এত পুরনো স্থাপনা হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এর কাঠামোগত দুর্বলতা বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে এখানে বেশ কয়েকটি দেয়াল, বিম এবং পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে।বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছি এবং ইতোমধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী,বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।

তিনি জানান,বুয়েট থেকে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী দল ভবনটির কাঠামোগত সক্ষমতা যাচাই করবে।একই সঙ্গে ভবনটি ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন রেখে কীভাবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা যায় তা নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।

মেয়র জোর দিয়ে বলেন,এটা এমন একটা ভবন,যার সঙ্গে দেশের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।তাই আমরা চাই না এটার ডিজাইন বা ঐতিহ্য নষ্ট হোক।একই নকশা রেখে এটাকে আরও শক্তিশালী ও টেকসই করে তুলতে হবে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রতি আহ্বান,সংস্কারের কাজকে সফল করতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন মেয়র।তিনি বলেন,সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ চট্টগ্রামের সব সেবামুখী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। এই জাদুঘর সংরক্ষণ করা কোনো একক প্রতিষ্ঠানের কাজ নয়।বরং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটাকে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ধরে রাখতে হবে।
স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত এই স্থান
মেয়র স্মৃতিচারণ করে বলেন,বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে দিয়েছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান।উই রিভল্ট উচ্চারণ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের একটি বড় অংশ চট্টগ্রামের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তিনি আরও বলেন,১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে তিনি শাহাদাতবরণ করেন।তাই তাঁর স্মৃতি বিজড়িত এই সার্কিট হাউজ ও জাদুঘর সংরক্ষণ করা আমাদের দায়িত্ব ও নৈতিক কর্তব্য।

মেয়র জানান,চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আমি নিজেই বিষয়টি নিয়মিত মনিটর করছি।খুব শিগগিরই সংস্কারের কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করছি।
তিনি বিশ্বাস করেন,পরিকল্পিত ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংস্কার করা গেলে ভবনটির ঐতিহাসিক স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন থাকবে এবং একই সঙ্গে নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে।

মেয়র আশা প্রকাশ করে বলেন,শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের এই স্মৃতি জাদুঘরের মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই জানবে না,বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও রাষ্ট্র গঠনে তাঁর অবদান সম্পর্কেও সম্যক ধারণা লাভ করবে।ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে যেন তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে পারে—সে সুযোগ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য।

পরিদর্শনকালে মেয়রের সঙ্গে গণপূর্ত অধিদপ্তর এবং জাদুঘরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।তারা সবাই একমত হন যে, জাদুঘর ভবনটি দ্রুত সংস্কার ও সংরক্ষণের আওতায় আনা প্রয়োজন।

ইতিহাস বলে যারা নিজেদের স্মৃতি,ঐতিহ্য ও সংগ্রামের দলিল সংরক্ষণ করতে পারে,তারাই সভ্যতার পথে এগিয়ে যায়।শহীদ জিয়া স্মৃতি জাদুঘর সেই ইতিহাসেরই অংশ। তাই এই স্থাপনাটিকে পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়া সময়ের দাবি,এমনটাই মনে করছেন চট্টগ্রামের নাগরিক ও ইতিহাস সংস্কৃতিমনা মানুষজন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button