অপরাধদুর্নীতি

পাঠদান ছাড়াই মাদ্রাসা! তদন্তের আশ্বাস শিক্ষা কর্মকর্তার

এম নজরুল ইসলাম

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য ইফতেদায়ি প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থীর নামে বরাদ্দকৃত নতুন বই মসজিদে মজুদ করে রাখার ঘটনায় এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন আব্দুল সত্তার ফকিরের ছেলে নলচিড়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন (আলমাস) সরেজমিনে গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের পিঙ্গলাকাঠী এলাকায় অবস্থিত বোরাদী গরঙ্গল জামে মসজিদে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের ভেতরে ইফতেদায়ি পর্যায়ের বিপুল সংখ্যক নতুন বই স্তূপ করে রাখা রয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আরও দেখা যায়, মসজিদের পাশে একটি ছোট ঘর রয়েছে, যা স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী আগে মক্তব পড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। তবে বর্তমানে ঘরটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষক বা নিয়মিত পাঠদানের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ঘরটির অবস্থা দেখে দীর্ঘদিন ধরে এটি ব্যবহার হচ্ছে না বলেই ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই এলাকায় বর্তমানে কোনো ইবতেদায়ি মাদ্রাসা বা নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। এলাকাবাসীর দাবি, এখানে কখনোই ইফতেদায়ি স্তরের পূর্ণাঙ্গ মাদ্রাসা ছিল না।
অন্যদিকে অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন দাবি করেন, গরঙ্গল বোরাদী আফজালিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর, টেবিল চেয়ার, হাই- ও লো বেঞ্চ, টুল, আলমীরা, আছে। তিনি আরো বলেন গৌরনদী শিক্ষা অফিসার আব্দুল জলিল তদন্ত সাপেক্ষে আমাদের বই দিয়েছেন। তবে বাস্তবে তার দাবির পক্ষে কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেবল একটি পরিত্যক্ত মক্তবের ঘর ছাড়া কোনো শ্রেণিকক্ষ বা শিক্ষা কার্যক্রমের চিহ্ন দেখা যায়নি।

তদন্তকালে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির নামে কোনো ছাত্র-ছাত্রীর হাজিরা খাতা নেই, নেই কোনো শিক্ষকের হাজিরা খাতা। নেই কোনো বৈধ পরিচালনা কমিটির কাগজপত্রও। নেই কোন সরকারি অনুমোদন কাগজপত্র। শুধু ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৯ সালের কয়েকটি রেজুলেশন খাতা দেখানো হলেও তা দিয়ে একটি সচল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বোরাদী গরঙ্গল জামে মসজিদের ইমাম ও মসজিদের মুসল্লী নজরুল ইসলাম বলেন, জামাত নেতা ও মসজিদের সেক্রেটারি আলমাস এই বইগুলো এনে এখানে রেখেছেন। এখানে বর্তমানে কোনো মাদ্রাসার পাঠদান হয় না।ঘটনাটি নিয়ে গৌরনদী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল জলিল বলেন,অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরকারি বই বিতরণে এমন অনিয়ম ও ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বই উত্তোলনের অভিযোগে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button