সুষ্ঠু তথ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সঠিক হিসাব নেই বলে জানিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা বলেন, বিশ্বের নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ সড়ক দূর্ঘটনা (রোড ক্র্যাশ)। যা দেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির উপর বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দূর্ঘটনায় হতাহতের তথ্যে বড়ধরণের তারতম্য রয়েছে।এর কারণ সুষ্ঠ তথ্য ব্যবস্থাপনার অভাব।
আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রোড ক্র্যাশ তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী কর্মশালায় এসব কথা বলেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্বিক সহায়তায় কর্মশালার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলো নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি), সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং আরটিআই প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিট।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব স্বাস্থ্য উইং অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের বিশ্ব স্বাস্থ্য উইং-এর যুগ্ম সচিব মামুনুর রশীদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপ প্রতিনিধি ড. রাজেশ নারওয়াল, সিআইপিআরবি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম ফজলুর রহমান।
কর্মশালায় ২০২৫ সালের মধ্যে রোড সেফটি বিষয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য কম্প্রিহেনসিভ ডাটাবেইজ তৈরি করা, তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি, রোড ক্র্যাশ সংক্রান্ত সার্ভিলেন্স সিস্টেম তৈরি, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদনের বাইরে সংঘটিত হওয়া রোড ক্র্যাশে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নির্ধারণ করা, জাতীয় পরিকল্পনায় রোড ক্র্যাশের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, রোড ক্র্যাশজনিত কারণে মৃত্যুর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা, সর্বোপরি রোড ক্র্যাশ তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি লিড এজেন্সী নির্ধারণ করার উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
কর্মশালায় সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, অ-পরীক্ষিত ও বহুমূখী সুচকের ব্যবহার, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতির ভিন্নতা, পরীক্ষামূলক প্রকল্পের আওতায় ভিন্ন ভিন্ন ডাটাবেজ তৈরি, যথাযথ তথ্য বিশ্লেষণের অপ্রতুলতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কারণগুলো উঠে আসে।
এ সময় জানানো হয়, রোড ক্র্যাশে বিশ্বে প্রতিবছর ১১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ মারা যায়।প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ আহত হয়। যা প্রতি মিনিটে ২ জন ও প্রতিদিন ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি। যাদের বেশিরভাগই শিশু এবং উপার্জনক্ষম।
কর্মশালায় অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি বলেন, রোড ক্র্যাশ বিষয়ক তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির ত্রুটিসমূহ দূর করতে প্রয়োজনীয় সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে। বাংলাদেশ সরকার চালক, পথচারী ও সাইক্লিস্টদের জন্য সড়ককে নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।
যুগ্ম সচিব মামুনুর রশীদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে রোড ক্র্যাশ বিষয়ক রেজুল্যুশন নেওয়া হয়েছে। চলতি দশককে ‘ডিকেড অফ অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০’ ঘোষণা করা হয়েছে। যাতে বাংলাদেশ সরকার একাত্মতা প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
ড. রাজেশ নারওয়াল বলেন, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়টি নিশ্চিত করা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ নয়। এটি নিশ্চিত করতে দরকার সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সরকারের এই উদ্যোগের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরে আনন্দিত।
অধ্যাপক ড. একেএম ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের সড়ককে জনসাধারণের জন্য নিরাপদ করতে সঠিক ও গুণগতমান সম্পন্ন তথ্য ও যথাযথ পরিকল্পনার কোনো বিকল্প নেই।