অব্যাবস্থাপনাপ্রযুক্তি

রেলওয়ের মোট জমি ৬১ হাজার ৮৬১ একর, ব্যবহার মাত্র ৫১ শতাংশ

সারা দেশে বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট ৬১ হাজার ৮৬১ একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করছে ৩১ হাজার ৫৬৯ একর জমি। অর্থাৎ মোট জমির ৫১ শতাংশ ব্যবহার করছে রেলওয়ে। বৈধভাবে ইজারা দেওয়া রয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ একর জমি।অবৈধভাবে দখলে আছে তিন হাজার ৮৪২ একর। ১১ হাজার ৯৭৭ একর জমি অব্যবহৃত রয়েছে। এসব জমি কোনো কাজে আসছে না। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনের আশপাশে রেলের মোট জমি ৫৮ একর। এর মধ্যে অন্তত ১১ একর জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। অবৈধভাবে দখল করা এসব জমি থেকে দখলদাররা মাসে প্রায় কোটি টাকা আয় করছে। আর তেজগঁওা রেলস্টেশনের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূ-সম্পত্তি থেকে মাসে আয় হয় মোটে দুই লাখ টাকার মতো।ট্রাকস্ট্যান্ড, বস্তি, বহুতল আবাসিক ভবন, ক্লাবের কার্যালয় ও মাঠ, ফলের আড়ত—সবই রয়েছে রেলের জমিতে। রয়েছে মসজিদ, বিদ্যালয়, মাদরাসা ও মন্দির।

আরেকটি ঘটনায় দেখা যায়, ২০০৬ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে রেলের জমি ইজারা দেওয়া হয়। তখন অবশ্য রেলপথ মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে তৈরি হয়নি। ২০১১ সালে এই মন্ত্রণালয়ের যাত্রা শুরু।

২০২২ সালে রেলওয়ের ওই জায়গাকে জলাশয় উল্লেখ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণকাজে বাধা দেয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। তারপর আদালতের আদেশে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে জায়গা বুঝে পেতে রেলকে ওই প্রতিষ্ঠান চিঠি দিয়েছে। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা ওই জায়গায় শিশু পার্ক নির্মাণ করবেন জানিয়ে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন।  

গত বুধবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কালের কণ্ঠকে বলেন, অবৈধ দখলে থাকা জায়গা মুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু জায়গা রেল উদ্ধারও করেছে। আর খালি জায়গায় সোলার এনার্জি (সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র) করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিছু জায়গার জন্য কমার্শিয়াল টেন্ডার দেওয়া হবে।

লোকবল ও পর্যাপ্ত বাজেট নেই : 

রেলপথ মন্ত্রণালয়ে জমি তদারকে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেই। ভূমির সঙ্গে আইনসংক্রান্ত বিষয়টি সরাসরি জড়িত। কিন্তু ভূমি ও আইন শাখায় পরিচালক পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তা নেই। রেলের জায়গা দখলমুক্ত করার কিছুদিন পরই আবার বেদখল হয়ে যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বেশ কিছু জায়গায় জনবল দরকার এটা ঠিক। আসলে রেল একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। তাই চাইলেই জনবল নেওয়া যায় না। আমরা চেষ্টা করছি আয় বাড়ানোর। আয় বাড়লে নিজস্ব সক্ষমতায় জনবল নেওয়া যাবে।’

হাতছাড়া ১২ মার্কেট : 

১৯৮৪ সালের ১২ জুলাই এক আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় রেলওয়ে বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়। সেখানে রেলের জমিতে গড়ে ওঠা ১২টি মার্কেটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায় তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন। এসব মার্কেট রেলের ৯.১৯ একর জমির ওপর নির্মিত। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এসব মার্কেটের মালিকানাই যেন আর রেলের হাতে নেই।

আনন্দবাজার দখলে নেবে রেল : 

রাজধানীর চানখাঁরপুল থেকে বঙ্গবাজারের দিকে যেতে বাঁদিকে আনন্দবাজার মার্কেট। এই মার্কেট এখন আর সিটি করপোরেশনের দখলেও নেই। এটি বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় স্থানীয় নেতারা দখল করে রেখেছেন। এই মার্কেটটি রেলওয়ে এখন উদ্ধার করে নতুন করে ইজারা দিতে চায়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের হস্তান্তরিত ১২টি মার্কেটের মধ্যে আনন্দবাজার মার্কেট বাদ দিয়ে ১১টি মার্কেটের ৫.২২ একর ভূমির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button