পলাতক কর্মচারির ভুতুড়ে হাজিরা লাকসামে
নিজস্ব প্রতিবেদক : রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল লাকসামের পদবী- ট্রেন পরীক্ষক (টিএক্সআর) হলেও কর্মচারীদের জন্য ছিলেন আতংক আরিফুল হায়দার চৌধুরী মান্না তার পরম সহযোগী ও ছায়া হিসেবে কাজ করতো রেলওয়ে শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও লাকসাম হেড টিএক্সআর দপ্তরের ষ্টোর মুন্সী হাসান আহমেদ পলাশ।
মন্ত্রীর শ্যালকের নাম ভাঙিয়ে মসজিদের পাশেই মাদক আখড়া বসানো ,দখল ও টিকিট কালোবাজারি সহ নানা করণে ছিলেন তারা সমালোচিত।
সামান্য কারণে রেলওয়ের কর্মচারী সহ সাধারণ মানুষকে ধরে এনে টর্চাল সেলে এনে নির্যাতন করতো।
৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান তারা । ভুক্তভোগীরা তাদের বিরুদ্ধে লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পোস্টার ও ব্যনার সাটানো সহ মিছিল করেছেন। তবে এসব কিছুর মধ্যে হাজিরা খাতায় নিয়মিত সাক্ষর করছেন মান্না। এনিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য বলেন, ৫ মাস ধরে পলাতক ব্যক্তি কিভাবে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করলেন তা খোঁজে চলছে তদন্ত।
ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট পালিয়ে যায় লাকসাম রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন টিএক্সআর আরিফুল হায়দার চৌধুরী মান্না, রেলওয়ে শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও লাকসাম হেড টিএক্সআর দপ্তরের ষ্টোর মুন্সী হাসান আহমেদ পলাশ।
২ ডিসেম্বর টি এক্স আর অফিস থেকে হাজিরা খাতা নিয়ে সাক্ষর করে তা আবার অফিসে রেখে যান। বিষয়টি নজরে আসলে পলাতক ব্যক্তির নিয়মিত হাজিরা নিয়ে রেলঅঙ্গনে হৈচৈ শুরু হয়। অভিযোগ উঠেছে টিএক্সআর আকতার নিজে খাতা নিয়ে গিয়ে সই করিয়ে এনেছেন।
এদিকে অজ্ঞাত স্থান থেকে মান্নার হাজিরা খাতায় সইয়ের খবরে তার হাতে নির্যাতিত
লাকসাম রেলওয়ে জংশনে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। ভুক্তভোগীরা হাজিরা খাতা নিয়ে সাক্ষরের তদন্ত ও শান্তি দাবী তুলেন।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিএক্সআর মান্না ও ষ্টোর মুন্সী হাসান আহমেদ পলাশ তারা বিগত ১০ বছর চাকরি না করেই তুলতেন বেতন ভাতা ও টিএ বিল। সাবেক সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলীর সঙ্গে চলাফেরা করার কারণে তাদের সঙ্গে ভয়ে কেউ মুখ খুলে কথা বলতেননা। সারাক্ষণ ঘুরাফেরা আর নেতাগিরি দেখিয়ে বেড়াতেন তারা। পলাশ রেলওয়ের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে চলতো। লাকসাম স্টেশন কে নিজের কব্জায় রেখে শ্রমিক- কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের কে লাঞ্ছিত করত।
অভিযোগ রয়েছে তারা প্রভাব খাটিয়ে লাকসাম রেলওয়ে জংশনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, প্রকাশ্য মাদক সেবন ও ব্যবসা ছাড়াও নিজেরাও প্রকাশ্যে মাদক সেবন করতেন। লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন মসজিদের পাশে বানিয়েছিলেন মাদকের আসর। মাদকাসক্তদের মাতলামির কারণে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে মসজিদে যেতে পারতেননা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেকে।
এছাড়াও রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের জিম্মি করে আদায় করত হাজার টাকা চাঁদাবাজি। ট্রেনের হকারদের কাছ থেকেও নিত চাঁদা। তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই ধরে নিয়ে নির্যাতন করত।
৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আরিফুল হায়দার চৌধুরী মান্নার সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি৷
নির্যাতনের শিকার লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন গার্ড মো. মহিউদ্দিন বলেন,মানুষ যখন মসজিদে ঢুকত মান্না ও পলাশ তখন মদ খেয়ে মাতাল হয়ে সেখানে পড়ে থাকত। এসবে প্রতিবাদ করায় আমার বাসায় একাধিকবার হামলা করেছে তারা। মসজিদের পাশে মাদকের আখড়া বসানোর প্রতিবাদ করায় মান্না ও পলাশ আমাকে আমার জম্মস্থান বিতাড়িত করেছে। মান্না ও পলাশের ভয়ে আমি ৪ বছর এলাকায় যেতে পারিনি। আমি তাদের শাস্তি দাবি জানাই৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্য মো.উল্লাহ বলেন, হাজিরা খাতায় করা সই মান্নার তা নিশ্চিত। পাঁচমাস ধরে চাকরিতে অনুপস্থিত ব্যক্তি কিভাবে নিয়মিত হাজিরা খাতায় সই করে তা রহস্যজনক।
এ নিয়ে তদন্তে গিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি। তবে সিসিটিভি ফুটেজ না থাকায় একটু সময় লাগছে। আশা করি দ্রুত এ নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়া সম্ভব হবে৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লাকসাম রেলওয়ে হেড টি এক্সআর ফরহাদ হোসেন বলেন, মান্না সাহেব গত পাঁচ মাস ধরে চাকরিতে অনুপস্থিত। এখন তিনি যদি অফিসে এসে বা কৌশলে খাতা নিয়ে সই করেন তাতে কোন লাভ নেই। খাতায় সাক্ষর কি তার নাকি অন্য কেউ করেছে তা তদন্তের স্বার্থে এখন বলা যাবেনা।