গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী ব্যক্তির শাস্তি খুব অপমানজনক।
যেহেতু এসব কাজের ভাল-মন্দ স্বাদ চোখ ও কানের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়, সেহেতু আল্লাহ তা‘আলা এমন শাস্তি নির্ধারণ করেছেন যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং বড় অপমানজনক। অবৈধ ক্রীড়া-কৌতুক, টিভি-সিনেমা, পেপার ও রাস্তা-ঘাটের অশ্লীল ছবি প্রদর্শন হারাম। অশ্লীল ক্যাসেট, বই-পুস্তক ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম। অশ্লীল কবিতা, উপন্যাস এবং বাতিলপন্থীদের পুস্তক পাঠ করাও হারাম। বর্তমানে অধিকাংশ যুবক-যুবতী অশ্লীল ক্যাসেট,বই, গান-বাজনা, উপন্যাস, পেশাদার অপরাধীদের কাহিনী অথবা অশ্লীল কবিতা পাঠে অভ্যস্ত। এ সবের শাস্তি উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِيْنٌ-
‘এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে অন্ধভাবে গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ করে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করে এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’ (লুক্বমান ৬)।
عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ.
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অবশ্যই অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য ও গান-বাজনা বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’ (বুখারী হা/৫৫৯০)।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ والكُوْبَةَ.
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা মদ, জুয়া ও সব ধরনের বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন’ (বায়হাক্বী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৫০৩ ; বাংলা ৮ম খন্ড হা/৪৩০৪)।
عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوْهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوْهُنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ.
আবু ওমামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় কর না, তাদের ক্রয় কর না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিয়ো না, তাদের উপার্জন হারাম (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)
অত্র হাদীছে গান-বাজনার যে কোন মাধ্যম হারাম করা হয়েছে। কাজেই সিনেমা, যাত্রা, ভিসিডি, থিয়েটার আরো যত মাধ্যম আছে সবগুলির ব্যবসা হারাম।عَنْ اَبِيْ اُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ تَبِيْعُوا الْقَيْنَاتِ وَلاَ تَشْتَرُوْهُنَّ وَلاَ تُعَلِّمُوْهُنَّ وَثَمَنُهُنَّ حَرَامٌ.
আবু ওমামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় কর না, তাদের ক্রয় কর না, তাদের গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিয়ো না, তাদের উপার্জন হারাম (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৭৮০)
অত্র হাদীছে গান-বাজনার যে কোন মাধ্যম হারাম করা হয়েছে। কাজেই সিনেমা, যাত্রা, ভিসিডি, থিয়েটার আরো যত মাধ্যম আছে সবগুলির ব্যবসা হারাম।عَنْ نَافِعٍ قَالَ سَمِعَ ابْنُ عُمَرَ مِزْمَارًا قَالَ فَوَضَعَ إِصْبَعَيْهِ عَلَى أُذُنَيْهِ وَنَأَى عَنْ الطَّرِيقِ وَقَالَ لِي يَا نَافِعُ هَلْ تَسْمَعُ شَيْئًا قَالَ فَقُلْتُ لاَ قَالَ فَرَفَعَ إِصْبَعَيْهِ مِنْ أُذُنَيْهِ وَقَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمِعَ مِثْلَ هَذَا فَصَنَعَ مِثْلَ هَذَا.
নাফে‘ (রাঃ) বলেন, একদা ইবনু ওমর (রাঃ) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনতে পেলে তিনি তাঁর দুই কানে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গেলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, নাফে‘ তুমি কিছু শুনতে পাচ্ছ কি? আমি বললাম, না। তিনি তার দুই আঙ্গুল দুই কান হতে বের করে বললেন, আমি একদা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রাস্তা হতে সরে গিয়েছিলেন এবং আমাকে এভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেভাবে আজ তোমাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম (ছহীহ আবূদাঊদ হা/ ৪৯২৪, সনদ ছহীহ)।
অত্র হাদীছে বুঝা যাচ্ছে গান বাজনা ও বাদ্য যন্ত্রের শব্দ যেন কানে না আসে তার সম্ভবপর চেষ্টা করতে হবে।
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَكُوْنَنَّ فِى هذِه الْاُمّةِ خَسْفٌ وقَذْفٌ وَمَسْخٌ وذلِكَ اِذَا شَرِبُوْا الْخُمُوْرَ واتَّخَذُوْا القَيْنَاتِ وَضَرَبُوْا بِالْمَعَازِفِ.
আনাস (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, যখন আমার উম্মত নেশাদার দ্রব্য পান করবে, গায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হবে এবং বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত হবে তখন অবশ্যই তিনটি ভয়াবহ বিপদ নেমে আসবে- (১) বিভিন্ন এলাকায় ভূমি ধসে যাবে (২) উপর থেকে অথবা কোন জাতির পক্ষ থেকে যুলুম অত্যাচার চাপিয়ে দেওয়া হবে (৩) অনেকের পাপের দরুণ আকার-আকৃতি বিকৃত করা হবে। আর এ গজবের মূল কারণ তিনটি। (ক) মদ পান করা (খ) নায়িকাদের নিয়ে নাচ-গানে মত্ত হওয়া (গ) বাদ্য যন্ত্রের প্রতি আগ্রহী হওয়া।
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيُبَيِّتَنَّ قَوْمٌ مِنْ هذِهِ الْأمَّةِ عَلَى طَعَامٍ وَشَرَابٍ وَلَهْوٍ فَيَصْبَحُوْا قَدْ مَسَخُوْا قِرْدَةً وَخَنَازِيْرَ.
ইবনে আববাস (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, অবশ্য অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু সম্প্রদায় রাত্রী অতিবাহিত করবে বিভিন্ন ধরণের খাদ্য-পানীয়তে ভোগ বিলাসী হয়ে এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদন আনন্দ প্রমোদে। এমতাবস্থায় তাদের সকাল হবে শুকুর ও বানরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৬০৪/২৬৯৯)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, এক শ্রেণীর অর্থশালী মানুষেরা নানা ধরনের মদ ও পানীয়ের ব্যবস্থা করে অতি ভোগ-বিলাসে দিনাতিপাত করবে। নানা ধরণের আমোদ-প্রমোদে ও বিনোদনে রাত্রী যাপন করবে। এর মাধ্যম হবে নায়িকা, মদ ও বাদ্য যন্ত্র। এ ধরণের লোকেরা শুকুর ও বানরে পরিণত হবে। হয় তাদের আকৃতি শুকুর ও বানরের মত হবে, অথবা তাদের হালাল-হারামের বিবেচনা থাকবে না। এজন্য নবী করীম(সা.) তাদেরকে শুকুরের সাথে তুলনা করেছন। তাদের চাল-চলন হবে বিজাতিদের মত অর্থাৎ তাদের স্ত্রী ও মেয়েরা বিজাতিদের মত নানা পোশাক পরবে। আর এদের কাছে যেনা হবে সাধারণ কাজ। এদের বাড়ী-গাড়ি হবে কুকুর ও বিভিন্ন ধরনের মূর্তিতে পরিপূর্ণ। তাই তাদেরকে বানরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। কারণ তারা বিজাতিদের অনুকরণ করবে।
عَنْ اَبِىْ مَالِكِ الْاَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَشْرَبَنّ نَاسُ من امّتِىْ الخَمَرَ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اِسْمِهَا يُعْزَفُ عَلى رُؤوْسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ يَخْسِفُ اللهُ بِهِمُ الْاَرْضَ ويَجْعَلُ مِنْهُمُ الْقِرْدَةَ والْخَنَازِيْرَ.
আবু মালিক আশ‘আরী (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, আমার কিছু উম্মত মদ পান করবে এবং তার নাম রাখবে ভিন্ন। তাদের নেতাদেরকে গায়িকা ও বাদ্য যন্ত্র দিয়ে সম্মান করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভুমিকম্পের মাধ্যমে মাটিতেই ধসিয়ে দিবেন। আর তাদেরকে বানর ও শুকুরে পরিণত করবেন (বুখারী, ইবনে মাজাহ হা/৪০২০)। হাদীছে বুঝা গেল মানুষ মদ্যপান করবে, তবে মদের নাম অন্য হবে। আর নেতা ও দায়িত্বশীলদের সর্বক্ষণের সঙ্গী হবে বাদ্য যন্ত্র ও গায়িকা। এদের চরিত্র হবে নোংরা, এদের প্রিয় কাজ হবে অশ্লীলতা। তাদের স্বভাব ও কৃষ্টি-কালচার হবে শুকুর ও বানোরের ন্যায়। এরা স্বপরিবারে পাশ্চাত্যদের স্বভাব চরিত্র গ্রহণ করবে।
عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلى رَسُوْلِ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أنَّ رسولَ اللهِ صَلىّ اللهُ عَلَيْهِ وسلم قَالَ: وَإِنّ مِمّا أتَخَوَّفُ مِنْهُ عَلى أمّتِىْ أئِمّةً مُضِلِّيْنَ, وَسَتَعْبُدُ قَبَاِئلُ مِنْ أمّتى الْاَوْثَانَ, وَسَتَلْحَقُ قبائِلُ مِنْ أمتىْ بِالْمُشِركِيْنَ, وإنَّ بَيْنَ يدَىِ السَّاعَةِ دَجّالِيْنَ كَذّابِيْنَ قَرِيْبًا من ثلاثِيْنَ، كُلُّهُمْ يَزْعَمُ أنّه نَبِيّىٌ وَلَنْ تَزَالُ طَائِفَةٌ منْ أمَّتى على الْحَقّ مَنْصُوْرِيْنَ، لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ حتَّى يأتىَ أَمرُ اللهِ عَزّ وجلَّ-
রাসূল(সা.) -এর দাস ছাওবান (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, আমি সবচেয়ে যাদের বেশি ভয় করি তারা হচ্ছে নেতা ও এক শ্রেণীর আলেম সমাজ। অচিরেই আমার উম্মতের কিছু লোক মূর্তিপূজা করবে। আর অতি শীঘ্রই আমার উম্মতের কিছু লোক হিন্দু বা বিজাতিদের সাথে মিশে যাবে। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী দাবী করবে। আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। মহান আল্লাহর চূড়ান্ত নির্দেশ (ক্বিয়ামত) না আসা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না (ইবনে মাজাহ হা/৩৯৫২, হাদীছ ছহীহ)।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী দীর্ঘ ছিলেন না, আবার বেশী খাটোও ছিলেন না:
১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব দীর্ঘ ছিলেন না আবার খাটোও ছিলেন না। তিনি ধবধবে সাদা কিংবা বাদামী বর্ণেরও ছিলেন না। তাঁর চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একদম সোজাও ছিল না। ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ তা’আলা তাকে নবুওয়াত দান করেন। এরপর মক্কায় ১০ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর কাটান। আল্লাহ তা’আলা ৬০ বছর বয়সে তাঁকে ওফাত দান করেন। ওফাতকালে তাঁর মাথা ও দাড়ির ২০টি চুলও সাদা ছিল না।[1]
حَدَّثَنَا أَبُو رَجَاءٍ قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، عَنْ مَالِكِ بْنِ أَنَسٍ ، عَنْ رَبِيعَةَ بْنِ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، أَنَّهُ سَمِعَهُ , يَقُولُ : ” كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , لَيْسَ بِالطَّوِيلِ الْبَائِنِ ، وَلَا بِالْقَصِيرِ ، وَلَا بِالأَبْيَضِ الأَمْهَقِ ، وَلَا بِالآدَمِ ، وَلَا بِالْجَعْدِ الْقَطَطِ ، وَلَا بِالسَّبْطِ ، بَعَثَهُ اللَّهُ تَعَالَى عَلَى رَأْسِ أَرْبَعِينَ سَنَةً ، فَأَقَامَ بِمَكَّةَ عَشْرَ سِنِينَ ، وَبِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ ، وَتَوَفَّاهُ اللَّهُ تَعَالَى عَلَى رَأْسِ سِتِّينَ سَنَةً ، وَلَيْسَ فِي رَأْسِهِ وَلِحْيَتِهِ عِشْرُونَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ ” .
حدثنا ابو رجاء قتيبة بن سعيد ، عن مالك بن انس ، عن ربيعة بن ابي عبد الرحمن ، عن انس بن مالك ، انه سمعه , يقول : ” كان رسول الله صلى الله عليه وسلم , ليس بالطويل الباىن ، ولا بالقصير ، ولا بالابيض الامهق ، ولا بالادم ، ولا بالجعد القطط ، ولا بالسبط ، بعثه الله تعالى على راس اربعين سنة ، فاقام بمكة عشر سنين ، وبالمدينة عشر سنين ، وتوفاه الله تعالى على راس ستين سنة ، وليس في راسه ولحيته عشرون شعرة بيضاء ” .
[1] সহীহ বুখারী, হা/৫৯০০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৫; মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৫৪৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭৩৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৩৮৭।২. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যমাকৃতির ছিলেন। বেশি লম্বা কিংবা বেশি খাটোও ছিলেন না। তাঁর দেহ ছিল খুব আকর্ষণীয়। আর তাঁর চুল বেশি কোঁকড়ানো কিংবা একেবারে সোজাও ছিল না। তিনি ছিলেন গৌরবর্ণের। পথ চলতে তিনি সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে চলতেন।[1]
حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ مَسْعَدَةَ الْبَصْرِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ الثَّقَفِيُّ ، عَنْ حُمَيْدٍ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : ” كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَبْعَةً ، لَيْسَ بِالطَّوِيلِ وَلا بِالْقَصِيرِ ، حَسَنَ الْجِسْمِ ، وَكَانَ شَعْرُهُ لَيْسَ بِجَعْدٍ , وَلا سَبْطٍ أَسْمَرَ اللَّوْنِ ، إِذَا مَشَى يَتَكَفَّأُ “
حدثنا حميد بن مسعدة البصري ، قال : حدثنا عبد الوهاب الثقفي ، عن حميد ، عن انس بن مالك ، قال : ” كان رسول الله صلى الله عليه وسلم ربعة ، ليس بالطويل ولا بالقصير ، حسن الجسم ، وكان شعره ليس بجعد , ولا سبط اسمر اللون ، اذا مشى يتكفا “
[1] মুসনাদে আবু ই’আলা, হা/৩৮৩২; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৪০।তিনি ছিলেন মধ্যমাকৃতির:
৩. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যমাকৃতির ছিলেন। তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী অংশ ছিল তুলনামূলক প্রশস্ত। তাঁর ঘন চুলগুলো কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। তাঁর দেহে লাল লুঙ্গি ও লাল চাদর শোভা পেত। আমি তাঁর তুলনায় সুদর্শন কাউকে কখনো দেখিনি।[1]
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا شُعْبَةُ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، قَالَ : سَمِعْتُ الْبَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ , يَقُولُ : ” كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , رَجُلا مَرْبُوعًا , بَعِيدَ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ ، عَظِيمَ الْجُمَّةِ إِلَى شَحْمَةِ أُذُنَيْهِ الْيُسْرَى ، عَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ ، مَا رَأَيْتُ شَيْئًا قَطُّ أَحْسَنَ مِنْهُ ” .
حدثنا محمد بن بشار ، قال : حدثنا محمد بن جعفر ، قال : حدثنا شعبة ، عن ابي اسحاق ، قال : سمعت البراء بن عازب , يقول : ” كان رسول الله صلى الله عليه وسلم , رجلا مربوعا , بعيد ما بين المنكبين ، عظيم الجمة الى شحمة اذنيه اليسرى ، عليه حلة حمراء ، ما رايت شيىا قط احسن منه ” .
[1] সহীহ বুখারী, হা/৩৫৫১; সহীহ মুসলিম, হা/৬২১০; নাসাঈ, হা/৫২৩২।৪. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলবিশিষ্ট লাল চাদর ও লাল লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে সুদর্শন কাউকে দেখিনি। তাঁর কেশগুচ্ছ ছিল কাঁধ বরাবর। তাঁর দু’কাঁধের মধ্যবর্তী স্থান অন্যদের তুলনায় কিছুটা প্রশস্ত ছিল। তিনি অধিক খাটো বা অধিক দীর্ঘাকৃতির ছিলেন না।[1]
حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ، قَالَ : ” مَا رَأَيْتُ مِنْ ذِي لِمَّةٍ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ أَحْسَنَ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ ، لَهُ شَعْرٌ يَضْرِبُ مَنْكِبَيْهِ ، بَعِيدُ مَا بَيْنَ الْمَنْكِبَيْنِ ، لَمْ يَكُنْ بِالْقَصِيرِ , وَلا بِالطَّوِيلِ ” .
حدثنا محمود بن غيلان ، قال : حدثنا وكيع ، قال : حدثنا سفيان ، عن ابي اسحاق ، عن البراء بن عازب ، قال : ” ما رايت من ذي لمة في حلة حمراء احسن من رسول الله ، له شعر يضرب منكبيه ، بعيد ما بين المنكبين ، لم يكن بالقصير , ولا بالطويل ” .
[1] সহীহ মুসলিম, হা/৬২১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫৮১।একটি ভুল ছিল তাও আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা ঘটনাটি ঘটিয়েছিলেন।
মক্কার মুশরিকরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে ইহুদীদের শিখানো অনুযায়ী অসহাবে কাহফ সম্পর্কে প্রশ্ন করে , তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) “ইনশাআল্লাহ” না বলেই তাদের সাথে অাগামীকাল জওয়াব দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন । প্রিয় বন্ধুর সামান্য ক্রুটির জন্যও তাকে হুশিয়ার করা হয়। । তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে পনর দিন (১৫) পর্যন্ত কোন ওহী আগমন করেনি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খুবই চিন্তিত হলেন । মুশরিকরা বিদ্রুপ ও উপহাসের সুযোগ পেল। পনের দিন বিরতির পর সুরা কাহাফে মুশফিকেদের প্রশ্নের জওয়াব নাযিল হল , তখন এর সাথে হিদায়েতের জন্য এ দু ’ টি আয়াতও অবতীর্ণ হয় যা নীচে উল্লেখ করা হলঃ
(২৩) আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেনই না যে , সেটি “আমি আগামী কাল করব” ( ২৪ )” আল্লাহ ইচ্ছা করলে” বলা ব্যতিরেকে । যখন ভুলে যান , তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথনির্দেশ করবেন । ((সুরা কাহফ)
ভবিষ্যতে কোন কাজ করার কথা বলা হলে ইনশাআল্লাহ্ বলে এ কথার স্বীকারোক্তি করা উচিত যে , প্রত্যেক কাজ আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল । এ আয়াত থেকে প্রথমত জানা গেল যে , এরূপ ক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ লা মুস্তাহাব । দ্বিতীয়ত যদি ভুলক্রমে বাক্যটি না বলা হয় , তবে যখনই স্মরণ হয় , তখনই তা বলা দরকার ।
ঘটনাটি শুধু আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্য। আল্লাহ তার আগে পিছের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাকে এত ভালোবাসেন যে আর কাউকে অত ভালোবাসেন নি।
একবার এক সাহাবী এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর নবী, ” আপনি কবে থেকে নবী? ” রসুলুল্লাহ (সাঃ) উত্তর দিলেন, “আমি অহংকারের সাথে একথা বলছি না,” আমি তখন থেকে নবী যখন হজরত আদম (আঃ) মাটি ও কাদার পাত্রের মধ্যে পড়ে ছিলেন “(অর্থাৎ তখনও আদম (আঃ) এর আকৃতি তৈরি করা হয় নি)রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাটির মানুষ ছিলেন; নূরের তৈরী নন। আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী!) ‘তুমি বলে দাও, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মত একজন মানুষ মাত্র। (পার্থক্য হ’ল) আমার নিকট ‘অহি’ করা হয় …’ (কাহ্ফ ১৮/১১০)। এটা কেবল আমাদের নবীই নন, বরং বিগত সকল নবীই স্ব স্ব কওমের উদ্দেশ্যে একথা বলেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের মত মানুষ মাত্র’ (ইবরাহীম ১৪/১১)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমি তো একজন মানুষ। আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই। সুতরাং আমি (ছালাতে কিছু) ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ো’ (বুখারী হা/৪০১; মুসলিম হা/৫৭২; মিশকাত হা/১০১৬ ‘সিজদায়ে সহো’ অনুচ্ছেদ)। তিনি বলেন, আমি একজন মানুষ। আমি তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কোন কিছু আদেশ করলে তা গ্রহণ করবে। আর নিজস্ব রায় থেকে কিছু বললে আমি একজন মানুষ মাত্র। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রে আমার ভুলও হ’তে পারে (মুসলিম হা/২৩৬৫, মিশকাত হা/১৪৭)।
বস্ত্ততঃ ফেরেশতারা হ’ল নূরের তৈরী, জিনেরা আগুনের তৈরী এবং মানুষ হ’ল মাটির তৈরী মুসলিম হা/২৯৯৬; মিশকাত হা/৫৭০১; মুমিনূন ২৩/১২, আন‘আম ৬/২)।
উল্লেখ্য যে, রাসূল (ছাঃ) নূরের তৈরী ছিলেন মর্মে সমাজে কিছু হাদীছ প্রচলিত রয়েছে। যেমন ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেন’। এ মর্মে বর্ণিত সব বর্ণনাই জাল (‘আজলূনী, কাশফুল খাফা হা/৮২৭; ছহীহাহ হা/৪৫৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
সূরা মায়েদাহ ১৫ আয়াতে বলা হয়েছে, قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُوْرٌ وَكِتَابٌ مُبِيْنٌ ‘তোমাদের কাছে এসেছে একটি জ্যোতি এবং একটি সমুজ্জ্বল গ্রন্থ’। উক্ত আয়াতে ‘নূর’ বা জ্যোতি দ্বারা কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কুরআন শিরকের অন্ধকার হ’তে মানুষকে তাওহীদের আলোর পথে বের করে আনে। এখানে ‘ওয়া কিতাবুম মুবীন’ (وَكتابٌ مبيْنٌ)তার পূর্ববর্তী ‘নূর’ (نُوْرٌ)-এর উপর عطف بيان হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন, ‘তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে একটি জ্যোতি ও সমুজ্জ্বল গ্রন্থ’। যেমন ইতিপূর্বে সূরা নিসা ১৭৪-৭৫ আয়াতে بُرْهَانٌ ও نُوْرًا مُبِيْنًا বলে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। অমনিভাবে সূরা আ‘রাফ ১৫৭ আয়াতের কুরআনকে ‘নূর’ বলা হয়েছে।
উক্ত আয়াতের তাফসীরে ‘নূর’-এর ব্যাখ্যায় যাজ্জাজ বলেন, এখানে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে (কুরতূবী)। যদি সেটাই ধরে নেওয়া হয়, তাহ’লেও এর অর্থ এই নয় যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) নূরের তৈরী ছিলেন। কারণ কুরআনেই বলা হয়েছে যে, তিনি তোমাদের মত মানুষ ছিলেন’ (কাহফ ১৮/১১০)। আর মানুষ বলেই তো তিনি পিতা-মাতার সন্তান ছিলেন এবং সন্তানের পিতা ছিলেন। তিনি খানা-পিনা ও বাজার-ঘাট করতেন। অতএব রাসূল (ছাঃ) যে মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।