ইসলাম ধর্ম

শাইখ আবদুল্লাহ হাদির কাছে জানতা চাওয়া কিছু প্রশ্ন

প্রশ্ন : কোন কোন ওজরে নামাজ জমা করে পড়া যায়?

উত্তর : প্রতি ওয়াক্তের সালাত যথাসময়ে আদায় করতে হবে এটাই ইসলামের সাধারণ বিধান।
তবে যেখানে মানুষের অতিরিক্ত কষ্ট হয় সেখানে ইসলাম সহজ করণার্থে দু ওয়াক্তের সালাত একত্রিত করার সুযোগ দিয়েছে।
যেমন, সফর অবস্থায় যোহর+আসর এবং মাগরিব+ইশা একসাথে অগ্রিম বা বিলম্বে একত্রিত করা জায়েয আছে।
অনুরূপভাবে প্রচণ্ড ঝড়-বাদলের সময় রাস্তাঘাটে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়লে পুরুষরা মসজিদে একসাথে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী দু ওয়াক্তের সালাত আদায় করে দিতে পারে। তবে মহিলারা যেহেতু বাড়িতেই থাকবে, তাদের জন্য মসজিদে গমন করা আবশ্যক নয় তাই তারা যথাসময়ে নিজ ঘরেই সালাত আদায় করবে। তাদের জন্য এই অবস্থায় দু ওয়াক্তের সালাত একত্রিত করা বৈধ হবে না। (আল্লামা উসাইমীন রহ.)
অনুরূপভাবে মানুষ যদি এমন কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয় যখন সালাত আদায় করতে গেলে মারাত্মক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে তখন ইসলাম দু ওয়াক্তের সালাত আদায় করার সুযোগ দিয়েছে। যেমন, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন:
أن النبي صلى الله عليه وسلم جمع في المدينة من غير خوف ولا مطر، قالوا لابن عباس: ما أراد بذلك؟ قال: أراد ألا يحرج أمته)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় ভয় বা বৃষ্টি-বাদল ছাড়াই দু ওয়াক্তের সালাত একসাথে আদায় করেছেন।
সাহাবীগণ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, এর পেছনে রাসূল এর কী উদ্দেশ্য ছিল?
তিনি বললেন, উদ্দেশ্য ছিল, যে তার উম্মত যেন সমস্যায় পড়ে না যায়। অর্থাৎ একান্ত কষ্টকর পরিস্থিতির শিকার হলে তারা দু ওয়াক্তের সালাত একত্রিত করতে পারে।”(সহীহ মুসলিম)

প্রশ্ন : একান্ত কষ্টকর পরিস্থিতির শিকার হলে দু ওয়াক্তের সালাত একত্রিত করতে পারে।”(সহীহ মুসলিম) -এ হাদিসের আলোকে.. একান্ত কষ্টকর পরিস্থিতি বলতে এখানে কি বুঝানো হয়েছে শাইখ যদি একটু উদাহরণ দিতেন তাহলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হতো।

উত্তর : আসলে সমস্যার কোন শেষ নেই। কখন কোন পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তা বলা যায় না।
 উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, যেমন ডাক্তার রোগীর অপারেশন করছে। এমতাবস্থায় ডাক্তার সালাতে গেলে রোগী দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যেতে পারে অথবা ইন্ডাস্ট্রির কোন মেশিন পরিচলনার সময় অপারেটর সেখানে থাকা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার বিকল্প কেউ নেই । এখন সে সালাতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন ইমার্জেন্সি ক্ষেত্রে যোহর+আসর এবং মাগরির+ইশার সালাত একত্রিত করা জায়েয আছে ইনশাআল্লাহ।
(১ম উদাহরণটির ক্ষেত্রে দু নামায একত্রিত করার পক্ষে সউদী সবোর্চ্চ ওলামা পরিষদের ফতোয়া রয়েছে) আল্লাহু আলাম 

~~~~

প্রশ্ন : দেশে মহিলাদের জন্য যেখানে সেখানে নামাজের ব্যবস্থা নাই এবং অনেক সমস্যাও ফেস করতে হয় যার জন্য অনেক সময় নামাজের সময় অতিবাহিত হয়ে যায় এ ক্ষেত্রে কি আমরা বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দু ওয়াক্তের নামাজ একসাথে পরতে পারবো? একটু জানাবেন শাইখ।
উত্তর : প্রতিটি নামাযকে যথাসময়ে আদায় করা নামাযের অন্যতম একটি শর্ত। শরীয়ত অনুমদিত ক্ষেত্র ছাড়া আগে-পিছে করার সুযোগ নেই। মহিলারা বাইরে গেলে তাদের জন্য নামাযের সমস্যা হলেও অসম্ভব নয়। ইচ্ছা থাকলে আল্লাহ সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। দূরে সফরে গেলে তা দু ওয়াক্তের সালাত একসাথে জমা করে পড়ার সুযোগ আছে। পানি না পেলে বা ওযু করা সম্ভব না হলে তায়াম্মুমের সুযোগ আছে। অনেক স্থানে মসজিদে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে। তাও না থাকলে আপনি একটু আড়ালে গিয়ে কমপক্ষে ফরজ সালাতটা আদায় করে নিতে পারেন। হিজাব পড়ে সালাত আদায় করলে কিছু মানুষ দেখলেও তাতে সমস্যা নেই। এভাবে আপনি চেস্টা করলে অবশ্যই আল্লাহ সাহায্য করবেন। এটা পরীক্ষিত।
কিন্তু বাইরে গিয়ে সালাতে সমস্যা হওয়ার আশংকায় সময়ের আগে তা আদায় করা বৈধ হবে না। আল্লাহু আলাম।

উত্তর দিয়েছেন শাইখ আবদুল্লাহ হাদি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button