অপরাধএক্সক্লুসিভ

ফতুল্লা মডেল থানার দ্বিতীয় কার্যালয় আব্দুল কাদের কম্পিউটার

বিশেষ প্রতিবেদকঃ পুলিশই জনতা,জনতাই পুলিশ।এমন স্লোগানকে সামনে নিয়ে যাত্রা করলেও বিগত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতায় বহাল রাখা ও ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার সহযোগিতার দায়ে জনগন থেকে সবচেয়ে বেশি নিন্দা ও ক্ষোভের শিকার হয় পুলিশ বাহিনী।

কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তার অর্থ পিপাসা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার প্রবনতা থেকে সৃষ্ট অনিয়ম ও অত্যাচার এর দায় বহন করতে হয়েছে গোটা পুলিশ বাহিনীকে।জুলাই -২৪ এর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ফ্যাসিষ্ট বিদায়ের পরে অনেকটা মুখথুবড়ে পড়েছিলো প্রশাসনের এই বিভাগ।পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আবারো জনগনের সাথে এই বাহিনীর মধ্যবর্তী সম্পর্কের উন্নতি হলেও ফতুল্লা মডেল থানা এখনও রয়ে গিয়েছে আগের ন্যায়।

ঘুষ বানিজ্য, দ্বায়িত্বে অবহেলা,জনসাধারণের সাথে অসৎ ব্যবহার এগুলো তাদের রোজনামচায় এখনও লিপিবদ্ধ। নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা মডেল থানার অবস্থা দেখে রীতিমত আস্থা হারাতে বসেছে জনসাধারণ। বিগত আন্দোলন ও আন্দোলন পরবর্তী সময়ে জনরোষানল ও চরম ভাবে অপদস্ত হওয়ার চিত্র দেখেও জ্ঞান ফেরেনি এই ফতুল্লা মডেল থানার কর্মকর্তাদের।জিডি ও অভিযোগ গ্রহণ করে সুষ্ঠ তদন্ত নিশ্চিত করে সঠিক সেবা প্রদান সহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে মামলা গ্রহণ করা থানার অন্যতম দ্বায়িত্ব। এছাড়াও থানার অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সহ জনসাধারণ এর আস্থা ও আইনি নির্ভরতার জায়গায় পৌঁছানোই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ প্রতিটি থানা কর্মকর্তাদের।

কিন্তু ফতুল্লা থানাতে অভিযোগ করতে গেলে ডিউটিরত কর্মকর্তাদের শুরু হয় তালবাহানা। থানায় লেখা হয় না অভিযোগ। ভুক্তভোগী অভিযোগ লিখে দিতে চাইলেও নেওয়া নিষিদ্ধ সে অভিযোগ ফতুল্লা থানায়। অভিযোগ লেখার জন্য রয়েছে নির্ধারিত আব্দুল কাদের কম্পিউটার ও রূপা ষ্টুডিও।সেখান থেকেই লিখতে হবে অভিযোগ। কৌশলে ডিউটিরত পুলিশ সদস্য পাঠিয়েদেন এই দোকানে।থানার প্রধান ফটকের কোল ঘেষে অবস্থিত কয়েক কক্ষ বিশিষ্ট এই কম্পিউটার এর দোকানে রয়েছে প্রায় ১০-১২জন কম্পিউটার অপারেটর।তাদের প্রত্যেকের রয়েছে প্রচুর ব্যস্ততা।থানার অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগ প্রত্যাহার সহ প্রায় অধিকাংশ কাজই চলে এই আব্দুল কাদের কম্পিউটার এর দোকানে।এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মোঃআনিছ জানান গত ৮ই জানুয়ারি আমি আমাকে মারধর ও আমার গাড়ীর কাগজপত্র ছিনতাই এর একটি অভিযোগ নিয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় রাত নয়টার দিকে গেলে দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম আমাকে বলে থানায় অভিযোগ লেখা হয় না।

আপনি কম্পিউটার এর দোকান থেকে লিখে নিয়ে আসেন।আমার সাথে থাকা আমার বড় ভাই অভিযোগ লিখতে পারেন ও হাতে লিখে দেই মর্মে অনুরোধ করলে এসআই নজরুল ইসলাম বলেন হাতে লিখলে অভিযোগ হবে না।কম্পিউটার লিখতে হবে।আর থানায় অভিযোগ লেখার কাজ করা হয় না।বাইরে গেটের পাশে দেখেন কম্পিউটার এর দোকান আছে ঐখান থেকে লিখে নিয়ে আসেন।অভিযোগ লিখতে আব্দুল কাদের কম্পিউটার এর দোকানে গেলে তারা আমার অভিযোগ টির টাইপ মূল্য রাখেন ৩০০টাকা।যেখানে এক পৃষ্ঠা টাইপিং এর সর্বোচ্চ মূল্য ৫০-৬০টাকা হওয়া উচিৎ।

এত টাকা কেন নিলেন জানতে চাইলে দোকানদার জানান আমরাই সব অভিযোগ লিখি,পরবর্তীতে কপি লাগলে আমরা ফ্রীতে দেই।এছাড়াও তদন্তের সময় পুলিশ এর সাথে যোগাযোগ করতে সহযোগিতা আমরাই করে থাকি।আপনি আমাদের থেকে সব সহযোগিতা পাবেন।এরপর থানায় গিয়ে ৩০০ টাকা নেওয়ার বিষয়টা বললে এসআই নজরুল ও অন্য একজন পুলিশ সদস্য আমার সাথে চরম রাগান্বিত হয়ে পড়েন।আনিছ আরো জানান সবচেয়ে বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি আমার অভিযোগ স্থলে গিয়ে বিএনপির সাবেক এমপির বাড়ীর সাথে আমার অভিযোগ স্থল হওয়ায় এসআই দেলোয়ার ঐখানে গিয়ে বিএনপির নেতাদের খোঁজ করেন এবং ডাকেন।আমার অভিযোগ এর তদন্ত কালে এসআই দেলোয়ার এর সামনে আমাকে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি সহ কয়েকজন ব্যক্তি বারবার মারতে তেড়ে আসেন।এসআই দেলোয়ার যেন আমজনতার মত আমার উপর হওয়া অন্যায় দেখছে।মুহুর্তেই বুঝে গেলাম পুলিশ আগে এক দলের এখন আর এক দলের গোলামী করছে।তাই তার এমন নিরূপায় চেহারা দেখে নিজেকে গনপিটুনীর হাত থেকে রক্ষা করতে সব অভিযোগ ভূলে গিয়ে চলে এলাম।


এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু স্থানীয় লোকের থেকে জানা যায় আব্দুল কাদের কম্পিউটার ও রূপা স্টুডিও থানার যোগসাজশেই এসকল কাজ করছে।অভিযোগকারীর থেকে আদায়কৃত টাকার অর্ধেক দেওয়া হয় থানায়।এছাড়াও স্থানীয় কিছু ব্যক্তিও জড়িত রয়েছেন বলে জানা যায়।এবং অভিযোগ প্রত্যাহার,সহ অভিযুক্ত ও অভিযোগ কারীর থেকে পুলিশ সদস্যরা এই দোকানে বসে আলোচনা ও ছোটখাটো লেনদেন করে থাকেন বলে জানা যায়।
এবিষয়ে সচেতন মহলের দাবি এধরণের কর্মকান্ড পুলিশ বাহিনীর ভাব মুর্তি নষ্ট করছে।অচিরেই এধরনের আচারন ও কার্যক্রম বন্ধ না করলে জনসাধারণ এই থানা ও দ্বায়িত্বরত কর্মকর্তাদের উপর থেকে আস্থা হারাবেন।

থানায় অভিযোগ নেওয়ার ব্যবস্থা ও পুলিশ সদস্যদের এই দোকানে আনাগোনা বন্ধ করা জরুরি বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকগন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button