গুম তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়ল ৩০ জুন পর্যন্ত

আগের দফায় তিন মাস সময় বৃদ্ধি হয়েছিল।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সংঘটিত ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে এ সংক্রান্ত কমিশনের মেয়াদ আরও সাড়ে তিন মাস বাড়ানো হয়েছে।
এ কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়িয়ে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এতে বলা হয়, গুম কমিশনের মেয়াদ ১৫ মার্চ শেষ হওয়ার কথা থাকায় মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি ওই দিন থেকে কার্যকর হয়েছে বলে ধরা হয়েছে।
কমিশন গত ১৪ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়। পরদিন এ প্রতিবেদনের কিছু অংশ প্রকাশও করা হয়।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘গুমের নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে। ‘গুমের’ ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করা হয়।
সেদিন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর গুম বিষয়ক কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তারা মার্চে আরও একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন দেবেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন পড়বে।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পাওয়া তিনটি গোপন বন্দিশালা ঘুরে দেখেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদ এবং গুম তদন্ত কমিশনের সদস্যরাও।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গত ২৭ অগাস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করে দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা কমিশনের বিবেচনায় আনা হয়।
পরে ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ১৫ সেপ্টেম্বর নতুন প্রজ্ঞাপনে প্রতিবেদন জমা দিতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় ঠিক করে দেওয়া হয়। নতুন প্রজ্ঞাপনে কমিশনের উদ্দেশ্য ও দায়িত্বে পরিবর্তন আনে সরকার।
এরপর ৩ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে কমিশনের মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময় ঠিক করে দেওয়া হয়। প্রতিবেদন জমা দিতে এখন আরও তিন মাস সময় পেল মইনুল ইসলামের কমিশন।
কমিশনের দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে- আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে হওয়া গুমের তদন্ত করা।
এছাড়া এসব বাহিনীর সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টির মাধ্যমে ‘আয়নাঘর’ বা যেকোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, বলপূর্বক গুমের ঘটনার সহিত জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরা ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবে কমিশন। পাশাপাশি বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের সুপারিশ করবে।
পাঁচ সদস্যের কমিশনের অন্যরা হলেন- হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।